summary of George Eliot’s “Silas Marner” in Bengali, presented as a story:
সাইলাস মার্নার – জর্জ এলিয়ট
গল্পটি শুরু হয় র্যাভেলো (Raveloe) গ্রামের কাছে একটি ছোট, নিরিবিলি কুঁড়েঘরে বসবাসকারী এক তাঁতি, সাইলাস মার্নারকে নিয়ে। সাইলাস একসময় ল্যানটার্ন ইয়ার্ড (Lantern Yard) নামে অন্য একটি শহরে বসবাস করতেন, যেখানে তিনি একজন ধার্মিক এবং সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন ডিকন ছিলেন এবং খুব সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল উইলিয়াম ডানস্টান, যার সাথে তার একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
কিন্তু উইলিয়াম ডানস্টান ছিল অসৎ প্রকৃতির। সে সাইলাসকে নির্মমভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে। উইলিয়াম সাইলাসের প্রিয় বান্ধবী সারার সাথে প্রতারণা করে এবং তার বিরুদ্ধে একটি চুরির মিথ্যা অভিযোগ তোলে। গির্জার লটারি প্রক্রিয়ায়, সাইলাসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনা সাইলাসের জীবন সম্পূর্ণভাবে ওলটপালট করে দেয়। সে মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, ঈশ্বরকেও বিশ্বাস করা ছেড়ে দেয় এবং সমাজের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়ে।
এই হতাশা এবং ভাঙা মন নিয়ে সাইলাস র্যাভেলো গ্রামে চলে আসে। এখানে সে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে গুটিয়ে নেয় এবং দিনরাত তাঁত বুনে। মানুষের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে না, কেবল অর্থ উপার্জন করে। সে তার উপার্জিত সোনার মুদ্রাগুলো একটি ব্যাগে ভরে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখত। এই সোনাগুলোই তার একমাত্র অবলম্বন, তার একমাত্র আনন্দ। সে এই মুদ্রাগুলোকে গভীরভাবে ভালোবাসত, যেন সেগুলো তার সন্তান। তার এই সোনা জমানোর অভ্যাস তাকে আরও নিঃসঙ্গ করে তোলে। র্যাভেলোর গ্রামের মানুষ তাকে এক অদ্ভুত, একাকী মানুষ হিসেবে দেখত এবং তাকে এড়িয়ে চলত।
গল্পের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো ডানস্টান ক্যাসে। সে ছিল একজন ধনী ভূস্বামী, জ্যাসপার ক্যাসের (জ্যাসপার ছিল র্যাভেলোর প্রধান ভূস্বামী) ছোট ছেলে এবং সে খুব দায়িত্বজ্ঞানহীন ও জুয়াড়ি প্রকৃতির ছিল। ডানস্টান একবার সাইলাসের কুঁড়েঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এবং জানত যে সাইলাস সোনা জমানোর জন্য বিখ্যাত। যখন তার অর্থের খুব প্রয়োজন হয়, তখন সে সাইলাসের কুঁড়েঘরে ঢোকে এবং সাইলাসের সব সোনা চুরি করে পালিয়ে যায়। সোনা হারানোর পর সাইলাস সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। তার জীবনের একমাত্র অবলম্বনটুকুও হারিয়ে সে যেন আবার সেই পুরনো হতাশায় ডুবে যায়। সে চিৎকার করে সবার কাছে সাহায্যের আবেদন জানায়, কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করে না।
এদিকে, ডানস্টানের বড় ভাই, গডফ্রে ক্যাসে ছিল ভালো মনের মানুষ, কিন্তু দুর্বল চরিত্রের। সে গোপনভাবে ড্রাগ-আসক্ত মলি ফারেনকে বিয়ে করেছিল এবং তাদের একটি ছোট মেয়ে ছিল। এই সম্পর্ককে সে অস্বীকার করত কারণ সে র্যাভেলোর সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ন্যান্সি ল্যামিটারকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। একদিন, মলি ফারেন তার ছোট মেয়েকে নিয়ে গডফ্রের খোঁজে র্যাভেলোর দিকে আসে, কিন্তু তুষারঝড়ের মধ্যে সে পথ হারিয়ে ফেলে এবং ঠান্ডায় মারা যায়। তার শিশুকন্যাটি হামাগুড়ি দিয়ে সাইলাসের কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে।
সাইলাস যখন সোনা হারানোর শোকে উন্মাদপ্রায় অবস্থায় ছিল, তখন সে কুঁড়েঘরে প্রবেশকারী ছোট্ট শিশুটিকে দেখে। প্রথমে সে ভাবে যে এটি তার হারানো সোনার ব্যাগ, কারণ শিশুটির স্বর্ণকেশী চুল সূর্যের আলোয় ঝলমল করছিল। কিন্তু যখন সে শিশুটিকে স্পর্শ করে, তখন বুঝতে পারে এটি একটি জীবন্ত, উষ্ণ শিশু। শিশুটিকে দেখে তার মধ্যে এক নতুন অনুভূতি জাগে, যা দীর্ঘদিনের নিঃসঙ্গতা এবং হতাশায় হারিয়ে গিয়েছিল। সে শিশুটির নামকরণ করে এপি (Eppie) – তার মৃত মায়ের নাম এপি ছিল।
সাইলাস এপিকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করতে শুরু করে। এপি তার জীবনে নতুন করে অর্থ এবং আনন্দ নিয়ে আসে। সে এখন আর সোনা জমানোর দিকে মন দেয় না, বরং এপিকে বড় করাতেই তার সব মনোযোগ নিবদ্ধ থাকে। গ্রামের মানুষও সাইলাসের পরিবর্তন দেখে অবাক হয় এবং ধীরে ধীরে তার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়। এপি সাইলাসকে সমাজের সাথে পুনরায় সংযুক্ত করে।
গডফ্রে ক্যাসে পরে ন্যান্সি ল্যামিটারকে বিয়ে করে এবং তারা নিঃসন্তান থাকে। বহু বছর পর, যখন এপি যুবতী হয়, তখন একটি খনির কাজ করার সময় সাইলাসের পুরনো কুঁড়েঘরের পাশে একটি গর্ত খোঁড়ার সময় ডানস্টানের কঙ্কাল এবং সাইলাসের চুরি হওয়া সোনাগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর, গডফ্রে ক্যাসে বাধ্য হয় সাইলাস এবং এপিরে কাছে গিয়ে সত্যিটা বলতে যে এপি তার নিজের মেয়ে।
গডফ্রে এবং ন্যান্সি এপিকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে চায়, তাকে একটি আরামদায়ক জীবন দিতে চায়। কিন্তু এপি সাইলাসকে ছেড়ে যেতে রাজি হয় না। সে সাইলাসকে তার সত্যিকারের বাবা হিসেবেই ভালোবাসে এবং তার সাথে দরিদ্র জীবনযাপন করতেও সে রাজি থাকে। এপি বলে, “যে আমাকে বড় করেছে, সে-ই আমার বাবা।”
গডফ্রে এবং ন্যান্সি তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং এপিকে তার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দেয়। গল্পটি সাইলাস এবং এপিয়ের পুনর্মিলন এবং এপির বিয়ে দিয়ে শেষ হয়। সাইলাস ল্যানটার্ন ইয়ার্ডে ফিরে যায় তার পুরনো জীবনের কিছু উত্তর খুঁজতে, কিন্তু সেই জায়গাটি সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
‘সাইলাস মার্নার’ গল্পটি মানুষের বিশ্বাস, সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং ভাগ্য কিভাবে মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে তার এক হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা। এটি দেখায় যে, বস্তুগত সম্পদের চেয়ে মানবিক সম্পর্ক এবং ভালোবাসার বন্ধনই জীবনের প্রকৃত অর্থ বয়ে আনে।