a summary of Martin Luther King Jr.’s “I Have a Dream” speech in Bengali, presented as a narrative:
আই হ্যাভ এ ড্রিম (আমার একটি স্বপ্ন আছে) – মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
গল্পটি শুরু হয় ১৯৬৩ সালের ২৮শে আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে এক ঐতিহাসিক দিনে। সেদিন, প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন ফর জবস অ্যান্ড ফ্রিডম’ (কর্মসংস্থান ও স্বাধীনতার জন্য ওয়াশিংটন অভিমুখে পদযাত্রা) নামক এক বিশাল সমাবেশে অংশ নিতে সমবেত হয়েছিল। এই জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডঃ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, একজন ব্যাপ্টিস্ট যাজক এবং আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা।
কিং তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন আমেরিকার প্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণ করে, যখন আব্রাহাম লিঙ্কন দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেন, এর একশ বছর পরেও কৃষ্ণাঙ্গরা স্বাধীন নয়। তারা আজও বৈষম্য, অবিচার এবং দারিদ্র্যের শেকলে বন্দী। তাদের জীবন আজও যেন একটি “ব্যাড চেক”-এর মতো, যা আমেরিকার সংবিধান তাদের কাছে লিখেছিল, কিন্তু যা পর্যাপ্ত তহবিল (অধিকার ও সুযোগ) না থাকায় বারবার ফেরত এসেছে। তিনি আফসোস করে বলেন, আমেরিকা তার কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের কাছে তার প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এরপর কিং তাঁর বিখ্যাত “আই হ্যাভ এ ড্রিম” অংশটি শুরু করেন, যা এই বক্তৃতার মূল মর্ম। তিনি ঘোষণা করেন যে, তার একটি স্বপ্ন আছে – এমন একটি আমেরিকার স্বপ্ন যেখানে জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য থাকবে না।
তিনি তাঁর স্বপ্নের কিছু চিত্র তুলে ধরেন:
- জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে: একসময় দাসত্বের দেশ জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে, প্রাক্তন দাসদের সন্তানরা এবং প্রাক্তন দাস-মালিকদের সন্তানরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এক টেবিলে বসতে পারবে।
- মিসিসিপি রাজ্য: মিসিসিপি, যা তখন অবিচার ও নিপীড়নের জ্বলন্ত আগুনে পুড়ছিল, সেটি একদিন স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মরূদ্যানে পরিণত হবে।
- তাঁর চার সন্তান: তাঁর নিজের ছোট ছোট সন্তানরা একদিন এমন এক জাতিতে বাস করবে, যেখানে তাদের চামড়ার রঙ দিয়ে নয়, বরং তাদের চরিত্রের গুণ দিয়ে বিচার করা হবে।
- আলাবামা: আলাবামার শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা একে অপরের ভাই-বোন হিসেবে হাত ধরে হাঁটতে পারবে।
- ভ্যালিজ এবং হিলস: প্রতিটি উপত্যকা উঁচু হবে এবং প্রতিটি পাহাড় নিচু হবে; এবড়োখেবড়ো জায়গাগুলো সমতল হবে এবং বাঁকা পথগুলো সোজা হবে; ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশিত হবে এবং সকল মানুষ একসাথে তা দেখতে পাবে।
কিং জোর দিয়ে বলেন যে, এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। তিনি সহিংসতার পথ পরিহার করার আহ্বান জানান এবং বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামে তাদের কখনোই ঘৃণা বা তিক্ততা দিয়ে নিজেদের পবিত্রতাকে কলুষিত করা উচিত নয়। তিনি শ্বেতাঙ্গ মিত্রদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার আহ্বান জানান, কারণ তাদের নিয়তি অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।
বক্তৃতার শেষে, তিনি বাইবেলের একটি লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, “ফ্রি অ্যাট লাস্ট! ফ্রি অ্যাট লাস্ট! থ্যাঙ্ক গড অলমাইটি, উই আর ফ্রি অ্যাট লাস্ট!” (অবশেষে মুক্ত! অবশেষে মুক্ত! সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ধন্যবাদ, আমরা অবশেষে মুক্ত!) – এই বলে তিনি তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে স্বাধীনতার স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়।
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ শুধুমাত্র একটি বক্তৃতা ছিল না, এটি ছিল একটি জাতির আত্মা এবং তার স্বপ্নগুলোর এক শক্তিশালী প্রতিধ্বনি। এটি আমেরিকার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এক মাইলফলক হিসেবে আজও বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং সাম্যের জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।