গল্পটি শুরু হয় এক প্রচণ্ড গরমের বিকেলে, যেখানে একদল শিশু তাদের মায়ের বারণ সত্ত্বেও বাইরে খেলার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। মা কিছুতেই তাদের বাইরে যেতে দেবেন না কারণ বাইরে সূর্য তেতে আছে। কিন্তু বাচ্চাদের জেদ আর কান্নাকাটি শুনে শেষ পর্যন্ত তিনি নরম হন এবং তাদের বারান্দা ও উঠোনে খেলার অনুমতি দেন, তবে বাগানের বাইরে পা রাখতে নিষেধ করেন।
বাচ্চারা আনন্দে লাফিয়ে ওঠে এবং তারা ‘লুকোচুরি’ খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। কে চোর হবে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বড়দের মধ্যে একজন, রাগহু, চোর হয়। সে চোখ বন্ধ করে গুনা শুরু করে আর বাকিরা লুকিয়ে পড়ে।
গল্পের মূল চরিত্র রবি, ছোটদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল এবং ভীতু। সে বড়দের সামনে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়। লুকানোর জন্য সে দ্রুত একটি অন্ধকার, নোংরা শেডের (গোডাউন) ভেতরে ঢুকে পড়ে। শেডটি ছিল খুবই অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে, পোকামাকড় আর ধুলোবালিতে ভরা। প্রথমদিকে তার খুব ভয় লাগছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে অন্ধকার এবং নির্জনতা তার কাছে আশ্রয় মনে হয়। সে অপেক্ষা করতে থাকে, কখন রাগহু তাকে খুঁজে পাবে। তার মনে হয়, এই লুকোচুরি খেলাটি তার জন্য একটি বড় পরীক্ষা, যেখানে সে জিততে চায়। সে কল্পনা করে, রাগহু সবাইকে খুঁজে পাবে, কিন্তু তাকে খুঁজে পাবে না, আর সে-ই হবে এই খেলার বিজয়ী।
দীর্ঘক্ষণ সে শেডের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। শেডের ভেতর অন্ধকার আর নীরবতার মধ্যে সে নিজেকে খুব একা অনুভব করে। একসময় তার মনে হয় যেন সে এক অন্য জগতে চলে গেছে, যেখানে সে একা এক রাজত্ব করছে। সময় গড়িয়ে যায়, সূর্য ডুবে যায়, সন্ধ্যা নেমে আসে। বাইরের খেলার শব্দও কমে আসে। রবি অপেক্ষা করতে থাকে, কখন তার নাম ধরে ডাকা হবে, কখন সে বেরিয়ে এসে সবাইকে চমকে দেবে।
কিন্তু কেউ তাকে খুঁজে বের করে না। একসময় রবি অধৈর্য হয়ে ওঠে এবং ভাবে, হয়তো রাগহু তাকে খুঁজে না পেয়েই খেলা শেষ করে দিয়েছে। সে মন খারাপ করে শেডের বাইরে আসে। বাইরে এসে সে দেখে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে এবং অন্যান্য বাচ্চারা অন্য খেলায় মগ্ন। তারা ভুলে গেছে যে রবি এখনো লুকোচুরি খেলছিল। তারা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে, গল্প করছে।
রবি বুঝতে পারে, তাকে সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাওয়া হয়েছে। তার বিজয় বা তার লুকানোর কষ্ট তাদের কাছে কিছুই নয়। সে এই ঘটনায় গভীরভাবে হতাশ হয় এবং তার ছোট মন ভেঙে যায়। তার মনে হয়, সে যেন সম্পূর্ণ মূল্যহীন। তার সব চেষ্টা বৃথা গেছে।
এই গল্পটি শিশুদের মনস্তত্ত্ব, তাদের আকাঙ্ক্ষা, তাদের আনন্দ, ভয়, এবং হতাশা খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলে। এটি দেখায় যে, ছোটদের খেলার জগতের মধ্যে কতটা গভীর অনুভূতি এবং সংবেদনশীলতা থাকতে পারে, যেখানে একটি খেলার ফলাফল তাদের মনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।