a summary of Abraham Lincoln’s “Gettysburg Address” in Bengali, presented as a story:
গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস – আব্রাহাম লিঙ্কন
গল্পটি শুরু হয় ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের গেটিসবার্গ শহরের কাছে একটি সামরিক সমাধিক্ষেত্র উৎসর্গ করার দিনে। এই সমাধিক্ষেত্রটি তৈরি করা হয়েছিল গেটিসবার্গের ভয়াবহ যুদ্ধের পর, যেখানে মাত্র কয়েক মাস আগে, জুলাই মাসে, আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে হাজার হাজার সৈন্য মারা গিয়েছিল, উভয় পক্ষেরই।
অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই গম্ভীর। প্রধান বক্তা ছিলেন এডওয়ার্ড এভারেট, যিনি প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে একটি দীর্ঘ এবং তথ্যবহুল বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তার বক্তৃতার পর, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনকে কিছু কথা বলার জন্য ডাকা হয়। লিঙ্কন মঞ্চে ওঠেন। তিনি জানতেন, তার সামনে থাকা জনতা এবং মৃত সৈনিকদের পরিবারবর্গ এমন এক গভীর শোক ও ত্যাগের পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে প্রতিটি শব্দই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লিঙ্কন তার বক্তৃতা শুরু করেন মাত্র দুশো তিয়াত্তরটি শব্দ দিয়ে, যা তিনি প্রায় দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে শেষ করেন। তিনি বলেন:
“আজ থেকে সাতাশি বছর আগে, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই মহাদেশে একটি নতুন জাতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা স্বাধীনতা এবং এই ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল যে সকল মানুষ সমানভাবে সৃষ্ট।”
এখানে লিঙ্কন আমেরিকার প্রতিষ্ঠার মূল নীতি, অর্থাৎ স্বাধীনতা এবং সাম্যের ধারণাকে স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বোঝাতে চান যে, এই জাতি একটি মহান আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
এরপর তিনি গেটিসবার্গের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে আছি, যা পরীক্ষা করছে যে সেই জাতি, অথবা যেকোনো জাতি, যা এই নীতিগুলোর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা টিকে থাকতে পারবে কিনা।” তিনি এই সমাধিক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, “আমরা আজ এই মহান যুদ্ধক্ষেত্রের একটি অংশকে যারা এখানে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের জন্য চূড়ান্ত বিশ্রামস্থল হিসেবে উৎসর্গ করতে এসেছি, যাতে এই জাতি টিকে থাকে।”
লিঙ্কন বলেন যে, তারা এখানে যা করছেন, তা বিশ্ব খুব বেশি মনে রাখবে না, কিন্তু গেটিসবার্গে যে সৈন্যরা প্রাণ দিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগ কখনোই ভোলা যাবে না। তিনি বলেন, “বিশ্ব হয়তো আমাদের এখানে বলা কথাগুলি তেমন মনে রাখবে না, কিন্তু তারা কখনোই ভুলবে না যা তারা এখানে করেছে।”
বক্তৃতার শেষাংশে লিঙ্কন অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ভাষায় বলেন যে, মৃত সৈনিকদের এই মহান আত্মত্যাগকে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, “বরং আমাদের উচিত এই সকল সম্মানিত মৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই অঙ্গীকার নেওয়া যে, আমরা সেই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করব, যার জন্য তারা এতদূর পর্যন্ত তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।”
তিনি ঘোষণা করেন যে, এই জাতির জন্য এখনো একটি বড় কাজ বাকি আছে – সেটি হলো একটি নতুন স্বাধীনতার জন্ম দেওয়া। তার বিখ্যাত উক্তি: “এবং এই জাতি, ঈশ্বরের অধীনে, স্বাধীনতার এক নতুন জন্ম লাভ করবে – এবং জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের সরকার পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে না।”
এই শেষ বাক্যটি গেটিসবার্গ অ্যাড্রেসের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ। লিঙ্কন এখানে গণতন্ত্রের এক নতুন সংজ্ঞা দেন – “জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের সরকার”। তিনি বোঝাতে চান যে এই যুদ্ধ শুধু দাসপ্রথার বিরুদ্ধে নয়, এটি ছিল গণতন্ত্রের ধারণাকে রক্ষা করার জন্য, যেখানে সরকার হবে মানুষের, মানুষের কল্যাণের জন্য, এবং মানুষের দ্বারা পরিচালিত।
লিটিসবার্গ অ্যাড্রেস ছিল একটি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত শক্তিশালী বক্তৃতা, যা আমেরিকান আদর্শ এবং গৃহযুদ্ধের উদ্দেশ্যকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। এটি আমেরিকান ইতিহাসে এবং গণতন্ত্রের ধারণার ইতিহাসে একটি অমর বক্তৃতা হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি স্বাধীনতা, সাম্য এবং আত্মত্যাগের গুরুত্বকে মহিমান্বিত করে।