a general summary of Nelson Mandela’s “Long Walk to Freedom” in Bengali:
লং ওয়াক টু ফ্রিডম (স্বাধীনতার দীর্ঘ পথচলা) – নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন ম্যান্ডেলার আত্মজীবনী ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’ হলো দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের এক অসাধারণ দলিল এবং তাঁর নিজের জীবনের এক মহাকাব্যিক যাত্রা। এই বইটি কেবল একজন ব্যক্তির জীবনকাহিনী নয়, এটি একটি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস।
গল্পটি শুরু হয় ম্যান্ডেলার শৈশবকাল থেকে, দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ছোট গ্রাম থেম্বুতে। তিনি তাঁর কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলো বর্ণনা করেন, যখন তিনি ঐতিহ্যবাহী থেম্বু সমাজে বেড়ে ওঠেন এবং তাঁর বাবার প্রভাবে বিচার ও ন্যায়বিচারের প্রাথমিক ধারণা লাভ করেন। এরপর তিনি জোহানেসবার্গে আসেন এবং একজন তরুণ আইনজীবী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এখানেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থার নিষ্ঠুরতা এবং অবিচার সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন হন।
বইটিতে ম্যান্ডেলা বর্ণনা করেছেন কীভাবে তিনি আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC) এর সাথে যুক্ত হন এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন শুরু করেন। শুরুর দিকে অহিংস প্রতিরোধকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও, যখন সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর চরম দমন-পীড়ন শুরু করে, তখন ম্যান্ডেলা এবং তাঁর সহকর্মীরা সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। তিনি “উমখোঁতো উই সিজওয়ে” (জাতির বর্শা) নামে ANC-এর সশস্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
তাঁর এই সংগ্রাম এবং কার্যক্রমের ফলস্বরূপ, ১৯৬৪ সালে ম্যান্ডেলাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বইয়ের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তাঁর ২৭ বছরের কারাবাসের মর্মস্পর্শী বর্ণনা। এর মধ্যে রোবেন দ্বীপ, পোলসমুর এবং ভিক্টর ভার্স্টার কারাগারগুলো উল্লেখযোগ্য। কারাগারে তাঁর অভিজ্ঞতা, একাকীত্ব, কঠোর পরিশ্রম, এবং সহবন্দীদের সাথে তাঁর সম্পর্ক – সবকিছুই তিনি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। কারাবাসের দিনগুলোতেও তিনি তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি; বরং এটি তাঁকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং বর্ণবাদমুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নকে আরও দৃঢ় করেছে। কারাগারে থাকাকালীনও তিনি গোপনে তাঁর সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন এবং বহির্বিশ্বে তাঁর মুক্তির জন্য আন্দোলন চলতে থাকে।
১৯৯০ সালে বিশ্বজুড়ে চাপের মুখে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন এবং বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের জন্য কাজ করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়লাভ করে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন।
বইটিতে ম্যান্ডেলা ক্ষমা, পুনর্মিলন এবং বিভেদ ভুলে একটি নতুন জাতি গঠনের উপর জোর দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একটি প্রকৃত স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য প্রতিশোধ নয়, বরং শান্তি ও বোঝাপড়ার প্রয়োজন। তাঁর এই যাত্রা কেবল শারীরিক স্বাধীনতা অর্জনের গল্প নয়, বরং এটি মানসিক মুক্তি, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচারের জন্য এক অবিচল সংকল্পের গল্প।
‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’ কেবল একটি আত্মজীবনী নয়, এটি মানবতা, সাহস এবং আশার এক অনুপ্রেরণামূলক বার্তা, যা বিশ্বজুড়ে মানুষকে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতে উৎসাহিত করে।