একক ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত।
একক ভর্তি পরীক্ষা কী?
একক ভর্তি পরীক্ষা হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একটি সাধারণ পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। এই পদ্ধতিতে, প্রার্থীরা একটি পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এটি সময় ও খরচ বাঁচায়, এবং প্রার্থীদের একাধিক পরীক্ষা দেওয়ার চাপ কমায়। বাংলাদেশে, ইউজিসি একক ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব করেছে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করেছে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে এবং ভর্তি পরীক্ষাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
Reference: banglatribune.com
একক ভর্তি পরীক্ষা কী ভাবে নেওয়া হবে এর নিয়মকানুন
একক ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা করে, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। এখানে কিছু মুখ্য বিষয় উল্লেখ করা হল:
ভর্তি পরীক্ষার কর্তৃপক্ষ: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একক ভর্তি পরীক্ষার খসড়া চূড়ান্ত করেছে, তবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠন করা সম্ভব না হওয়ায়, আপাতত এই অধ্যাদেশের অধীনেই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে।
ভর্তি পরীক্ষার নামকরণ: লেখক এনটিএ নামকরণের পরিবর্তে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন কমিশন (বিইউএসি) অথবা অন্যান্য নাম প্রস্তাব করেছেন।
ভর্তি পরীক্ষার সময়সীমা: এইচএসসি পরীক্ষার পর বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ক্লাস শুরু হয় পরের বছর জানুয়ারি কিংবা মার্চে।
ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন: বাংলাদেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বিএমডিসির অধীনে হয়, তবে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা এনটিএ অধীনে যাবে কিনা তা নির্ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ইউজিসি একটি অধ্যাদেশ জারি করবে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের উপরে প্রাধান্য পাবে। ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া, একটি কমিটি অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির দায়িত্ব পাবে। এই প্রক্রিয়া দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হবে।
যেভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা যেতে পারে
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যদি প্রকৌশল, বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য আর মেডিকেলকে একই কাতারে আনা হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রে একটি বিভাগ থাকবে যেখানে যৌথ প্রশ্ন হিসেবে ভাষা জ্ঞান, সাধারণ জ্ঞান ও গণিতকে সন্নিবেশিত করা যেতে পারে আর একটি বিভাগে ঐশ্চিক বিষয় থাকবে যার উত্তরে মিলবে বিষয় ভিত্তিক বিভাগ। বিজ্ঞানে বিষয়ে পড়তে গেলে শিক্ষার্থীকে রসায়ন, বায়োলজি, পদার্থ ও গণিত যেমন বাধ্যতামূলক তেমনি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে কেউ যদি বাণিজ্য কিংবা কলা বিভাগে ভর্তি হতে চায়, সেই ক্ষেত্রে তাকে সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি বিষয়ক প্রশ্নপত্র উত্তর দিতে হবে। যদিও আমাদের প্রচলিত উচ্চমাধ্যমিকে এই ধরনের সুযোগ রাখা হয়নি, তবে সেখানে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে আগামী সিলেবাসে যেকোনো একটিতে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। তেমনি বাণিজ্য, কলার শিক্ষার্থীদের উচ্চমাধ্যমিকে পঠিত রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট প্রশ্ন সুযোগ মিলবে। এই ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষা এক ঘণ্টায় না হয়ে অন্তত ২ বা তিন ঘণ্টার করা যেতে পারে।
ভাষা জ্ঞান:
সাধারণ জ্ঞান:
গণিত:
ধরুন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে গণিতে দুইটি (এ ও বি) বিভাগে মোট ৩০ টি প্রশ্ন থাকবে। একটিতে ১০ টি আর অপরটিতে ২০ টি। চারটি অপশনে এমসিকিউ আকারে এই ১০ টি প্রশ্ন কিছুটা সহজ হবে যার মধ্যে দিয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতার জন্য সকল ভর্তিচ্ছুদের কমপক্ষে ৫/৭ টি সঠিক উত্তর দেয়া প্রয়োজন। আর বাকী ২০ টি প্রশ্ন থাকবে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্টান্ডার্ডে কিছুটা জটিল। আর এই প্রশ্নগুলোর মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ সঠিক উত্তর প্রদানকারীদের মধ্যে থেকে শর্টলিস্ট করে ভর্তি পরীক্ষার ফরমে দেয়া পছন্দের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ক্রমনুসারে ভর্তির ফলাফল ঘোষণা করা যেতে পারে। যেহেতু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যতীত দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিষয়ক বিভাগ রয়েছে, সেহেতু সেখানেও একই ক্রম অনুসারে বিভাগগুলোতে অগ্রাধিকার পাবে।
বায়োলজি, রসায়ন ও পদার্থ:
ভর্তি পরবর্তী পড়াশুনার অভিজ্ঞতায় হয়ত বিষয় ভিত্তিক এইসব পড়াশুনায় গণিত কিংবা বায়োলজিক্যাল পড়াশুনার প্রয়োজন হয়ে উঠে না, তবে এইসব বিষয় সামগ্রিক জ্ঞান থাকা যে জরুরি তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারকদের জানা প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইভারসিটি জ্ঞান অর্জন করে যাচ্ছে। ধরুন, কেউ একজন কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করছে, পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ চুকানোর পর তিনি নিউরোসায়েন্স নিয়ে গবেষণা করছেন, কিংবা বায়োমেডিক্যাল ইনস্টিটিউট বা কোম্পানিতে জব করছেন। এখন এইসব জায়গায় যেতে হলে বেসিক বায়োলজিক্যাল জ্ঞান থাকা অনেকটাই বাধ্যতামূলক।
তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বায়োলজি, রসায়ন ও পদার্থ উপর প্রশ্নের উত্তর বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। একইভাবে প্রতিটি বিষয়ে দুই বিভাগে (এ ও বি) প্রশ্ন থাকবে, একটিতে তুলনামূলক সহজ আর অন্যটিতে বিশ্লেষণমূলক। ৩০ টি প্রশ্নের প্রথম বিভাগ (এ) ১০ টি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে কমপক্ষে ৫ টি সঠিক হওয়া প্রয়োজন আর ২০ টি প্রশ্নের উত্তরে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মিলবে ফার্মেসি, রসায়ন, প্রাণরসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়।
এই আলোচনা উদাহরণ হিসেবে কেবল বিজ্ঞানের বিষয়গুলোই আলোকপাত করা হয়েছে। একই ভাবে কলা, ও বাণিজ্যের বিষয়গুলো প্রশ্ন প্রণয়ন করা হবে।
যেভাবে স্কোর ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করা যেতে পারে
ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্তস্কোরকে ভর্তির নিট স্কোরকে মুখ্য হিসেবে ধরতে হবে। কারণ, একজন শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ স্কোরিং করে ভর্তি পরীক্ষার স্কোরে সংযোজন কিছুতেই ভর্তি পরীক্ষার যাচাইয়ের মানদণ্ড হতে পারে না। এর ফলে অনেক সময় নানা কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা জিপিএ খারাপ করলেও ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার পরও পিছিয়ে পড়ে। যা নৈতিকভাবে কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। অথচ এইসব ছেলে-মেয়ে পরবর্তীতে স্নাতক-স্নাতকোত্তরে মেধার সাক্ষর রেখে যায় বরং ওইসব জিপিএর চেয়ে প্রাকৃতিক মেধা যাচাই সৃজনশীল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক মেধাবীদের ঝরে পড়া থামানো সম্ভব।
আগামীতে যেহেতু পাবলিক পরীক্ষা কমে আসছে, সেহেতু এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফল কেবল ভর্তির আবেদন যোগ্যতা ও এইচএসসিতে বিষয় ভিত্তিকে প্রাপ্ত গ্রেড বা মার্ক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং তাদের বিভাগগুলোতে ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণে ব্যবহার করা যাবে। আবেদনের সময় শিক্ষার্থীদের পছন্দের ক্রম উল্লেখ করতে হবে। যেমন প্রকৌশল, মেডিকেল ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাপ্ত স্কোর ও বিভাগগুলোর দেয়া বিষয়ভিত্তিক নম্বরের শর্তপূরণ সাপেক্ষে ভর্তি পরীক্ষার স্কোর, র্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দক্রম ফলাফলে চলে আসবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আসন পূরণের পরই শিক্ষার্থীদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীন কলেজগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে। এই ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ওগুলো একই পরীক্ষার স্কোরে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।
আমি কেবল প্রস্তাবনাগুলো দিয়ে গেলাম। আমার মত অনেক শিক্ষানুরাগী মানুষের ভাবনা আছে। সেইগুলোকে সমন্বয়ের সুযোগ দেয়া উচিত। আমার বিশ্বাস ইউজিসি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে।
ড. নাদিম মাহমুদ গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: nadim.ru@gmail.com
Reference: একক ভর্তি পরীক্ষার কাঠামো: কারা সামলাবে, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হবে কীভাবে (prothomalo.com)
Last Year Update-
ইউজিসি’র সুপারিশ: বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের জন্য অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ।
কমিটির সিদ্ধান্ত: একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের জন্য গঠিত কমিটি এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছে।
অধ্যাদেশের প্রাধান্য: ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যাই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশ প্রাধান্য পাবে।
শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য: একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এই পৃষ্ঠাটি বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ এবং তার বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করে।
Reference: ugc.gov.bd