রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা

Table of Contents

রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষাটি ছিল একটি যুগান্তকারী পরীক্ষা যা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছিল।

পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

  • রাদারফোর্ড একটি পাতলা সোনার পাতের উপর আলফা কণার (ধনাত্মক চার্জযুক্ত হিলিয়াম নিউক্লিয়াস) একটি রশ্মি নিক্ষেপ করেন।
  • তিনি দেখতে পান যে বেশিরভাগ আলফা কণা সোজা পাতটি ভেদ করে চলে যায়, কিন্তু কিছু কণা বিভিন্ন কোণে বিচ্যুত হয় এবং কিছু কণা প্রায় সম্পূর্ণভাবে পিছনে ফিরে আসে।

পরীক্ষার ফলাফল:

  • পরমাণুর অধিকাংশ স্থান ফাঁকা: বেশিরভাগ আলফা কণা সোজা পাতটি ভেদ করে যাওয়ায় রাদারফোর্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পরমাণুর অধিকাংশ স্থান ফাঁকা।
  • ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস: কিছু আলফা কণা বড় কোণে বিচ্যুত হওয়ায় রাদারফোর্ড ধারণা করেন যে পরমাণুর কেন্দ্রে একটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত ভারী কেন্দ্র আছে, যা পরে নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত হয়।
  • পারমাণবিক মডেল: রাদারফোর্ড এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন পারমাণবিক মডেল প্রস্তাব করেন, যেখানে ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস কেন্দ্রে থাকে এবং ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ঘোরে।

গুরুত্ব:

  • রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।
  • এই পরীক্ষা পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কারের দিকে পরিচালিত করে এবং পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আরও গবেষণার পথ প্রশস্ত করে।

রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা: আরো বিস্তারিত খুঁটিনাটি

রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, আসুন কিছু খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করি:

পরীক্ষার উদ্দেশ্য:

রাদারফোর্ড এই পরীক্ষাটি মূলত থমসনের “প্লাম পুডিং” মডেল পরীক্ষা করার জন্য করেছিলেন। থমসনের মডেল অনুসারে, পরমাণুতে ধনাত্মক চার্জ সমানভাবে ছড়িয়ে থাকে এবং এর মধ্যে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন ছড়িয়ে থাকে। রাদারফোর্ড আশা করেছিলেন যে আলফা কণাগুলি সোনার পাত ভেদ করে সামান্য বিচ্যুত হবে।

পরীক্ষার যন্ত্রপাতি:

  • আলফা কণা উৎস: রেডিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে আলফা কণা নির্গত হয়।
  • সোনার পাত: খুব পাতলা সোনার পাত (প্রায় 0.00004 সেমি পুরু) ব্যবহার করা হয়েছিল যাতে আলফা কণাগুলি পাতটি ভেদ করতে পারে।
  • ফ্লোরোসেন্ট স্ক্রিন: জিঙ্ক সালফাইডের তৈরি একটি ফ্লোরোসেন্ট স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছিল আলফা কণা শনাক্ত করার জন্য। আলফা কণা স্ক্রিনে আঘাত করলে একটি ছোট আলোক ঝলকানি তৈরি হয়।
  • মাইক্রোস্কোপ: বিচ্যুত আলফা কণা গণনা করার জন্য একটি মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছিল।

পর্যবেক্ষণ:

  • অধিকাংশ আলফা কণা সোজা পাতটি ভেদ করে: এই পর্যবেক্ষণ থেকে রাদারফোর্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পরমাণুর অধিকাংশ স্থান ফাঁকা।
  • কিছু আলফা কণা ছোট কোণে বিচ্যুত হয়: এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে পরমাণুতে কিছু ধনাত্মক চার্জ আছে যা আলফা কণাগুলিকে বিকর্ষণ করে।
  • খুব কম সংখ্যক আলফা কণা বড় কোণে বিচ্যুত হয় (কিছু ক্ষেত্রে প্রায় ১৮০°): এই পর্যবেক্ষণ ছিল সবচেয়ে আশ্চর্যজনক। এটি ইঙ্গিত দেয় যে পরমাণুর কেন্দ্রে একটি ছোট এবং ভারী ধনাত্মক চার্জযুক্ত কেন্দ্র আছে।

বিশ্লেষণ:

রাদারফোর্ড পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এবং গাণিতিক গণনা করে দেখান যে পরমাণুর কেন্দ্রে একটি ছোট এবং ভারী ধনাত্মক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস আছে। তিনি এই নিউক্লিয়াসের আকার ও চার্জ অনুমান করতে সক্ষম হন।

উপসংহার:

রাদারফোর্ডের আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরীক্ষা ছিল। এই পরীক্ষা থমসনের “প্লাম পুডিং” মডেল বাতিল করে এবং পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কারের দিকে পরিচালিত করে। এই আবিষ্কার পরমাণুর গঠন সম্পর্কে আরও গবেষণার পথ প্রশস্ত করে এবং আধুনিক পারমাণবিক তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Today's Lesson

The Courses

Search Here

looking for something ?

Categories