স্বাভাবিক সংখ্যা (Natural Numbers)

Table of Contents

গণিতে সংখ্যার ধারণা অত্যন্ত বিশাল। তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গণনার কাজে আমরা যে সংখ্যাগুলো ব্যবহার করি, সেখান থেকেই স্বাভাবিক সংখ্যার উৎপত্তি। স্বাভাবিক সংখ্যাগুলোকে তাদের উৎপাদক বা গুণনীয়কের ওপর ভিত্তি করে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়: ১ (এক), মৌলিক সংখ্যা এবং যৌগিক সংখ্যা।

নিচে স্বাভাবিক সংখ্যা, মৌলিক সংখ্যা ও যৌগিক সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং এদের পারিপার্শ্বিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো।


১. স্বাভাবিক সংখ্যা (Natural Numbers)

গণনার কাজে ব্যবহৃত সব পূর্ণসংখ্যাকে স্বাভাবিক সংখ্যা বলা হয়। একে সাধারণত N দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

  • সেট: {N} = \{1, 2, 3, 4, 5, …\}

  • বৈশিষ্ট্য:

    • সবচেয়ে ছোট স্বাভাবিক সংখ্যা হলো 1

    • স্বাভাবিক সংখ্যার কোনো শেষ নেই, অর্থাৎ এটি অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।

    • পরপর দুটি স্বাভাবিক সংখ্যার পার্থক্য সর্বদা 1 হয়।

  • প্রকারভেদ: স্বাভাবিক সংখ্যাকে প্রধানত চারটি ভাগে আলোচনা করা যায়—১. মৌলিক সংখ্যা (Prime Numbers)২. যৌগিক সংখ্যা (Composite Numbers)

    ৩. ১ (একক বা Unit)

    ৪. নিখুঁত সংখ্যা (Perfect Numbers) – এটি বিশেষ ধরনের স্বাভাবিক সংখ্যা।

২. মৌলিক সংখ্যা (Prime Numbers)

যেসব স্বাভাবিক সংখ্যার মাত্র দুটি উৎপাদক বা গুণনীয়ক থাকে (১ এবং ওই সংখ্যাটি নিজে), তাদের মৌলিক সংখ্যা বলে। সহজ কথায়, যে সংখ্যাকে ১ এবং ওই সংখ্যাটি ছাড়া অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ ০ হয় না, তাই মৌলিক সংখ্যা।

  • উদাহরণ: 2, 3, 5, 7, 11, 13, 17, 19…

  • মৌলিক সংখ্যার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

    • সবচেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যা: 2

    • একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা: 2। (২ ছাড়া আর কোনো জোড় সংখ্যা মৌলিক হতে পারে না, কারণ অন্যান্য সব জোড় সংখ্যা ২ দিয়ে বিভাজ্য)।

    • ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মৌলিক সংখ্যা আছে ২৫টি।

      • ২, ৩, ৫, ৭ (৪টি)

      • ১১, ১৩, ১৭, ১৯ (৪টি)

      • ২৩, ২৯ (২টি)

      • ৩১, ৩৭ (২টি)

      • ৪১, ৪৩, ৪৭ (৩টি)

      • ৫৩, ৫৯ (২টি)

      • ৬১, ৬৭ (২টি)

      • ৭১, ৭৩, ৭৯ (৩টি)

      • ৮৩, ৮৯ (২টি)

      • ৯৭ (১টি)

ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনি (Sieve of Eratosthenes):

মৌলিক সংখ্যা বের করার একটি প্রাচীন ও সহজ পদ্ধতি হলো ইরাটোস্থিনিস ছাঁকনি। এই পদ্ধতিতে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা লিখে ক্রমান্বয়ে ২, ৩, ৫, ৭ এর গুণিতকগুলো কেটে দিলে অবশিষ্ট যে সংখ্যাগুলো থাকে, সেগুলোই মৌলিক সংখ্যা।

৩. যৌগিক সংখ্যা (Composite Numbers)

যেসব স্বাভাবিক সংখ্যার দুইয়ের অধিক উৎপাদক বা গুণনীয়ক থাকে, তাদের যৌগিক সংখ্যা বলে। অর্থাৎ, ১ এবং ওই সংখ্যাটি ছাড়াও অন্তত আরেকটি সংখ্যা দিয়ে এদের ভাগ করা যায়।

  • উদাহরণ:

    • 4 (উৎপাদক: ১, ২, ৪)

    • 6 (উৎপাদক: ১, ২, ৩, ৬)

    • 9 (উৎপাদক: ১, ৩, ৯)

  • যৌগিক সংখ্যার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

    • সবচেয়ে ছোট যৌগিক সংখ্যা: 4

    • সবচেয়ে ছোট বিজোড় যৌগিক সংখ্যা: 9

    • যেকোনো যৌগিক সংখ্যাকে মৌলিক সংখ্যার গুণফল হিসেবে প্রকাশ করা যায়। একে পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য (Fundamental Theorem of Arithmetic) বলা হয়।

৪. ‘১’ (এক) কি মৌলিক নাকি যৌগিক?

সংখ্যা ১ (One) মৌলিকও নয়, যৌগিকও নয়।

  • কারণ: মৌলিক সংখ্যা হতে হলে ঠিক দুটি ভিন্ন উৎপাদক থাকতে হবে (১ এবং সংখ্যাটি নিজে)। কিন্তু ১-এর উৎপাদক মাত্র একটি (সেটি ১ নিজেই)। আবার যৌগিক হতে হলে দুইয়ের অধিক উৎপাদক লাগে, যা ১-এর নেই।

  • তাই ১-কে বলা হয় একক সংখ্যা বা Unit

৫. কিছু সম্পর্কিত ও বিভ্রান্তিকর ধারণা (Advanced Concepts)

স্বাভাবিক সংখ্যার আলোচনার সাথে এই বিষয়গুলো জানা জরুরি:

ক. সহমৌলিক সংখ্যা (Co-prime Numbers)

দুটি সংখ্যার গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (গ.সা.গু) যদি ১ হয়, তবে তাদের পরস্পরের সহমৌলিক বলা হয়।

  • লক্ষ্য করুন: সহমৌলিক হওয়ার জন্য সংখ্যাগুলোকে নিজেরা মৌলিক হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

  • উদাহরণ: 8 এবং 9

    • ৮ এর উৎপাদক: ১, ২, ৪, ৮

    • ৯ এর উৎপাদক: ১, ৩, ৯

    • সাধারণ উৎপাদক শুধু ১। তাই ৮ ও ৯ সহমৌলিক, যদিও তারা নিজেরা যৌগিক সংখ্যা।

খ. যমজ মৌলিক (Twin Primes)

যদি দুটি মৌলিক সংখ্যার পার্থক্য ২ হয়, তবে তাদের যমজ মৌলিক বলা হয়।

  • উদাহরণ: (3, 5), (5, 7), (11, 13), (17, 19)

গ. নিখুঁত সংখ্যা (Perfect Numbers)

যে সংখ্যার নিজের চেয়ে ছোট সব উৎপাদকের যোগফল ওই সংখ্যাটির সমান হয়, তাকে নিখুঁত সংখ্যা বা পারফেক্ট নাম্বার বলে।

  • উদাহরণ: 6

    • ৬ এর উৎপাদক: ১, ২, ৩, ৬।

    • নিজেকে বাদ দিয়ে উৎপাদকগুলোর যোগফল: 1 + 2 + 3 = 6

    • পরবর্তী নিখুঁত সংখ্যা হলো ২৮। (1+2+4+7+14 = 28)।


একনজরে তুলনা

বৈশিষ্ট্য মৌলিক সংখ্যা (Prime) যৌগিক সংখ্যা (Composite) ১ (One)
সংজ্ঞা মাত্র ২টি উৎপাদক থাকে। ২-এর অধিক উৎপাদক থাকে। মাত্র ১টি উৎপাদক থাকে।
উদাহরণ ২, ৩, ৫, ৭, ১১… ৪, ৬, ৮, ৯, ১০…
ক্ষুদ্রতম সংখ্যা
জোড় সংখ্যা শুধুমাত্র ২ ২ বাদে সব জোড় সংখ্যা

বাস্তব জীবনে প্রয়োগ:

মৌলিক সংখ্যার ব্যবহার আধুনিক বিজ্ঞানে অপরিসীম। বিশেষ করে ক্রিপ্টোগ্রাফি (Cryptography) বা ইন্টারনেটে তথ্যের নিরাপত্তায় (যেমন: পাসওয়ার্ড এনক্রিপশন, ব্যাংকিং লেনদেন) বড় বড় মৌলিক সংখ্যার ব্যবহার অপরিহার্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Biology 1st Paper

কোষ ও এর গঠন
কোষ বিভাজন
কোষ রসায়ন
অণুজীব
শৈবাল ও ছত্রাক
ব্রায়ফাইটা ও টেরিডোফাইটা
নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদ
টিসু ও টিসুতন্ত্র
উদ্ভিদ শরীরতত্ত্ব
উদ্ভিদ প্রজনন
জীব প্রযুক্তি
বিস্তার ও সংরক্ষণ, পরিবেশ

Biology 2nd Paper

প্রাণীর ভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস
প্রাণীর পরিচিতি
পরিপাক ও শোষণ
রক্ত সঞ্চালন
শ্বাসক্রিয়া শ্বসন
বর্জ্য নিষ্কাশন
চলন ও অঙ্গচালনা
সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ
মানব জীবনের ধারাবাহিকতা
মানবদেহের প্রতিরক্ষা
জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন
প্রাণীর আচরণ

Our All Platforms

Physics

Chemistry

Biology

Math

HSC General

SSC General

SSC

HSC Science

Courses

HSC Bangla, Engish & ICT

Search Here

looking for something ?

Categories