ভাষা ও ইংরেজি ভাষা: একটি বিশদ বিশ্লেষণ
১. ভূমিকা
ভাষা মানব সভ্যতার এক মৌলিক স্তম্ভ, যা চিন্তা, যোগাযোগ এবং সংস্কৃতির বাহক হিসেবে কাজ করে। এটি কেবল শব্দ ও বাক্য সমষ্টি নয়, বরং মানুষের অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি জটিল ব্যবস্থা । ভাষার মাধ্যমেই মানুষ তার মনের ভাব, অনুভূতি ও ধারণা প্রকাশ করতে পারে এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে । ভাষার ধারণাটি একটি সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক বা অবিতর্কিত সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন, কারণ যেকোন কিছুর সংজ্ঞাই ভাষার মাধ্যমে দিতে হয় । এই বিষয়টি নির্দেশ করে যে ভাষা একটি স্থির ধারণা নয়, বরং এটি একটি জটিল, বহুমুখী এবং চলমান একাডেমিক আলোচনা ও ব্যাখ্যার বিষয়। এর সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদানে অসুবিধা এর সহজাত অভিযোজন ক্ষমতা এবং বোঝার ক্রমাগত বিবর্তনকে তুলে ধরে, যা ভাষাবিজ্ঞানের একটি মৌলিক দিক।
বর্তমান বিশ্বে ইংরেজি ভাষার বৈশ্বিক প্রভাব অনস্বীকার্য, যা আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, ব্যবসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে । এই প্রতিবেদনটি ভাষার সাধারণ সংজ্ঞা, উৎপত্তি, ইতিহাস ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করবে। এরপর বিশেষভাবে ইংরেজি ভাষার পরিচয়, এর ঐতিহাসিক পরিক্রমা, বর্তমান বৈশ্বিক গুরুত্ব এবং পরিসংখ্যানগত অবস্থান বিশদভাবে তুলে ধরবে।
২. ভাষা: সংজ্ঞা, প্রকৃতি ও প্রয়োজনীয়তা
২.১ ভাষার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
ভাষা হলো মানুষের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অর্থপূর্ণ কতকগুলো আওয়াজ বা ধ্বনির সমষ্টি। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনিই ভাষার প্রাণ । আরও সহজভাবে বলতে গেলে, এটি মানুষের মুখ নিঃসৃত কথাবার্তা । হেনরি সুইট, একজন ইংরেজ ফোনেটিশিয়ান এবং ভাষা পণ্ডিত, ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা দিয়েছেন: “ভাষা হল শব্দের সাথে মিলিত বাক্য এবং শব্দের মাধ্যমে ধারণার প্রকাশ। শব্দগুলি বাক্যে একত্রিত হয়, এই সংমিশ্রণটি ধারণাগুলির চিন্তার উত্তর দেয়” ।
ভাষা মূলত যোগাযোগের মাধ্যম যা শব্দ, বাক্য এবং ব্যাকরণের নিয়মের সমন্বয়ে গঠিত। এটি মানুষের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং ধারণা প্রকাশ করতে সাহায্য করে । সকল মানুষের ভাষাই বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম । ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর পরিবর্তনশীলতা; দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে । ভাষার প্রধান দুটি রূপ হলো মৌখিক ভাষা, যা কথা বলার মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়, এবং লিখিত ভাষা, যা লেখার মাধ্যমে ব্যবহৃত হয় । ভাষার সংজ্ঞার এই অন্তর্নিহিত জটিলতা এর গতিশীল ও বহুমুখী প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত। একাধিক দৃষ্টিকোণ (ধ্বনি, অর্থপূর্ণ অভিব্যক্তি, কাঠামোগত যোগাযোগ) এবং সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞার অভাব এই বিষয়টি স্পষ্ট করে যে ভাষা একটি স্থির বা সহজে শ্রেণীবদ্ধ করার মতো ঘটনা নয়, বরং একটি জটিল, বিবর্তনশীল ব্যবস্থা যা সহজ শ্রেণীকরণকে অস্বীকার করে। সংজ্ঞা দিতে অসুবিধা এর জৈব এবং অভিযোজনশীল প্রকৃতিকে তুলে ধরে, যা ক্রমাগত প্রভাবিত হয় দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে।
২.২ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভাষার ভূমিকা
ভাষা মানুষকে অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং সমাজের অংশ হতে সাহায্য করে । মানুষের ভাষার মধ্যে বুদ্ধির ব্যবহার থাকে, যা পশুপাখির চিৎকারের মতো নয়; পশুপাখির শব্দ তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহের পক্ষে দরকারি হলেও মানুষের ভাষার মতো বুদ্ধির ব্যবহার থাকে না । মানুষের উচ্চারিত, সুনির্দিষ্ট এবং অনেকের পক্ষে বোঝাবার উপযোগী ধ্বনি সমষ্টি হিসেবেই ভাষার পরিচয় ও প্রতিষ্ঠা । এই ক্ষমতা কেবল যোগাযোগ সম্পর্কে নয়; এটি হলো কীভাবে ভাষা বিমূর্ত চিন্তাভাবনা, জটিল সামাজিক সংগঠন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংস্কৃতির সঞ্চালনকে সহজ করে তোলে। জটিল চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার ক্ষমতা ভাষার একটি প্রত্যক্ষ ফলাফল, এবং এর গভীরতর তাৎপর্য হলো মানব বিবর্তন এবং সভ্যতার বিকাশে এর মৌলিক ভূমিকা, যা মানুষকে অন্যান্য প্রজাতি থেকে আলাদা করে।
২.৩ মানব জীবনে ভাষার অপরিহার্যতা
ভাষা মানুষের যোগাযোগের সহজাত মাধ্যম বা বাহন হিসেবে বিবেচিত হয় । মনের ভাব অন্যের কাছে ঠিকঠাক পৌঁছে দেবার জন্যই ভাষার প্রয়োজন। সেই ভাষা যাতে উপস্থিত সময় এবং স্থানের দূরত্ব পার হয়ে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছতে পারে, লিপির ব্যবহার সেইজন্যই অপরিহার্য । লিপির ইতিহাস আদিম মানুষের ছবি আঁকার প্রবৃত্তি থেকে শুরু হয়েছিল, যা দিয়ে তারা মনের ভাব প্রকাশ করত । কুইপু বা গ্রন্থিলিপির মতো পদ্ধতিও ছিল, যা দিয়ে দড়ির গিঁট ব্যবহার করে বিশেষ বিষয় বা ঘটনাকে চিহ্নিত ও নির্দিষ্ট করা হতো । এটি একটি স্পষ্ট কার্যকারণ সম্পর্ক দেখায়: স্থায়িত্ব এবং চিন্তার বৃহত্তর প্রসারের প্রয়োজনীয়তা লিপির বিকাশের দিকে পরিচালিত করে। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা মৌখিক যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে অভিযোজিত হয়েছিল, যার ফলে ধারণার দীর্ঘায়ু এবং ব্যাপক প্রভাব নিশ্চিত হয়। এই সহাবস্থান সম্পর্ক মানব যোগাযোগের বিবর্তনকে তুলে ধরে।
৩. ভাষার উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক বিবর্তন
৩.১ ভাষার উৎপত্তির বিভিন্ন তত্ত্ব
ভাষার উৎপত্তির সঠিক সময়কাল ও পদ্ধতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন, কারণ প্রাচীন ভাষার উৎসের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই । বিজ্ঞানীরা তাই বিভিন্ন অপ্রত্যক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে এর উৎস খোঁজার চেষ্টা করছেন । এই বিষয়টি ভাষার উৎপত্তির অনুমানমূলক প্রকৃতিকে তুলে ধরে, যা মানব জ্ঞানীয় বিবর্তনের গভীর রহস্য এবং জটিলতাকে প্রতিফলিত করে। তত্ত্বের এই প্রাচুর্য এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাব নির্দেশ করে যে ভাষার উৎপত্তি একটি মীমাংসিত বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নয়, বরং চলমান গবেষণার একটি জটিল ক্ষেত্র।
বিভিন্ন অনুমানমূলক তত্ত্ব বিদ্যমান:
- অলৌকিক তত্ত্ব (Miraculous Theory): বাইবেল অনুযায়ী, এই তত্ত্ব প্রস্তাব করে যে ভাষা একটি ‘Divine Gift’ বা স্বর্গীয় উপহার। এই তত্ত্ব অনুসারে, সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টির শুরুতেই তাদের মধ্যে ভাষা ও কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন ।
- উদ্ভাবন তত্ত্ব (Invention Theory):
- অনুকরণ তত্ত্ব (Imitation Theory / Onomatopoeia):
- প্রাকৃতিক ধ্বনি তত্ত্ব (Natural Sound Theory):
- Yo-he-ho তত্ত্ব: এই তত্ত্ব দাবি করে যে ভাষা সম্মিলিত ছন্দবদ্ধ শ্রম থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যেমন “heave” এবং “ho” এর মতো শব্দ ।
- Ta-ta তত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুসারে, মানুষ প্রথম শব্দ তৈরি করেছিল জিহ্বার নড়াচড়ার মাধ্যমে যা হাতের অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ করত ।
ভাষাতত্ত্ববিদদের মধ্যে একটি প্রধান বিতর্ক রয়েছে যে, সকল ভাষার উৎপত্তি একটি মাত্র উৎস থেকে হয়েছে (মনোজেনেসিস) নাকি প্রতিটি ভাষা আলাদা আলাদা উৎস থেকে উদ্ভূত ও বিকশিত হয়েছে (পলিজেনেসিস) ।
৩.২ আদিম মানব সমাজে ভাষার বিকাশ ও সময়কাল
ভাষার বিবর্তনের সময়কাল Homo habilis এর সময়কালের আদিম ভাষা-সদৃশ ব্যবস্থা (প্রোটো-ল্যাঙ্গুয়েজ) থেকে শুরু করে Homo erectus (১৮ লক্ষ বছর আগে) বা Homo heidelbergensis (৬ লক্ষ বছর আগে) এর প্রতীকী যোগাযোগ এবং Homo sapiens (৫০,০০০-১,৫০,০০০ বছর আগে) এর প্রকৃত ভাষার বিকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত । আদি মানুষের বিশেষ বাগযন্ত্রের উৎপত্তি এবং মস্তিষ্কের বিবর্তনের সাথে ভাষার উৎপত্তির সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশের সাথে ভাষার ক্ষমতা জড়িত, তাকে ব্রোকা-র এলাকা বলা হয় । মানব শারীরস্থান (বাগযন্ত্র, মস্তিষ্ক) এবং ভাষার সহ-বিবর্তন আমাদের ভাষাগত ক্ষমতার একটি গভীর জৈবিক ভিত্তি নির্দেশ করে। এটি কেবল শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে নয়; এটি একটি পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝায় যেখানে ভাষাগত ক্ষমতার বিকাশ শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনকে চালিত করে এবং এর বিপরীতেও। এই সহ-বিবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে ভাষা কেবল একটি শেখা দক্ষতা নয়, বরং একটি সহজাত জৈবিক প্রবণতা, যা মানব হওয়ার মৌলিক অংশ। মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে আকার-ইঙ্গিতের নির্বাক বা প্রাক-ভাষা থেকে অন্তত একবার মৌখিক ভাষার জন্ম হয় ।
৩.৩ ভাষাবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ
ভাষা কেবল শব্দের সমাহার নয়, এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক, সম্প্রদায় সৃষ্টি ও একীভূতকরণের ইতিহাস । ভাষা একটি সংস্কৃতির মানচিত্র, যা একটি জাতির সংস্কৃতি বুঝতে সাহায্য করে । নৃ-গবেষকরা কোনো নির্দিষ্ট জাতির সংস্কৃতি বুঝতে ভাষার হস্তক্ষেপকে অপরিহার্য মনে করেন, কারণ ভাষা তাদের সম্মিলিত চেতনা এবং ঐতিহাসিক যাত্রার একটি প্রত্যক্ষ জানালা প্রদান করে । এই বিষয়টি ভাষা সাংস্কৃতিক সঞ্চালন এবং পরিচয়ের একটি প্রাথমিক বাহন হিসেবে কাজ করে তা তুলে ধরে, যা মানব সমাজকে বোঝার জন্য এর অধ্যয়নকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। ভাষার প্রত্যক্ষ লিখিত নিদর্শন ৫ হাজার বছরের বেশি পুরনো নয়, তাই মুখের ভাষার উৎপত্তির জন্য অপ্রত্যক্ষ প্রমাণের ওপর নির্ভর করতে হয় ।
৪. ইংরেজি ভাষা: পরিচয় ও ঐতিহাসিক পরিক্রমা
৪.১ ইংরেজি ভাষার পরিচিতি ও ভাষাগত শ্রেণীবিভাগ
ইংরেজি ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের জার্মানীয় শাখার পশ্চিম জার্মানীয় উপ-শাখার অ্যাংলো-ফ্রিজীয় উপ-গোষ্ঠীর অ্যাংলীয় ভাষা । এটি বর্তমানে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে ছড়িয়ে থাকা অনেক দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধান ভাষা ।
৪.২ প্রাচীন ইংরেজি (Old English): অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগ ও প্রাথমিক প্রভাব (আনুমানিক ৪৫০-১১৫০ খ্রিস্টাব্দ)
প্রাচীন ইংরেজিকে অ্যাংলো-স্যাক্সন বা Englisc নামেও পরিচিত করা হয় । এটি ৫ম শতকের মধ্যভাগ থেকে ১২শ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বর্তমান ইংল্যান্ডে ও স্কটল্যান্ডের দক্ষিণভাগে প্রচলিত ছিল । ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে জার্মানীয় বসতি স্থাপনকারীরা প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন উপভাষায় কথা বলত, যা অ্যাংলো-স্যাক্সন নামে পরিচিত একটি ভাষায় বিকশিত হয় । এই ভাষা স্থানীয় ব্রিটনিক কেল্টিক এবং প্রাক্তন রোমান শাসকদের ল্যাটিন ভাষাকে স্থানচ্যুত করে ।
প্রাচীন ইংরেজিতে স্বতন্ত্র ব্যাকরণগত কাঠামো, জটিল বিভক্তি এবং মুক্ত শব্দক্রম ছিল। এটি আধুনিক জার্মান ভাষার সাথে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকরণগতভাবে বেশ মিল ছিল । এর শব্দভাণ্ডার প্রাচীন নর্স এবং ল্যাটিন দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল । খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তনের ফলে ৪০০টিরও বেশি ল্যাটিন ঋণ শব্দ যুক্ত হয় । প্রাচীন ইংরেজি প্রথমে রুনিক স্ক্রিপ্ট ‘ফুথর্ক’ ব্যবহার করে লেখা হতো, যা ৮ম শতাব্দীতে আইরিশ ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা প্রবর্তিত ল্যাটিন বর্ণমালা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় ।
এই সময়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে মহাকাব্য Beowulf, যা ৮ম থেকে ১১শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত হয়েছিল এবং এটিকে ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীনতম কবিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় । Cædmon’s Hymn একটি পূর্ববর্তী মৌখিক ভক্তিগীতি ছিল যা ৬৫৭-৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়েছিল । আধুনিক ইংরেজিভাষীরা প্রাচীন ইংরেজিকে প্রায় দুর্বোধ্য মনে করে, যদিও আধুনিক ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রায় অর্ধেক শব্দের মূল প্রাচীন ইংরেজিতে নিহিত । আধুনিক বক্তাদের কাছে প্রাচীন ইংরেজির এই দুর্বোধ্যতা, যদিও এর মূল শব্দগুলি বিদ্যমান, তা শত শত বছর ধরে ভাষার দ্রুত এবং গভীর বিবর্তনকে তুলে ধরে। এই বিষয়টি এর বর্তমান রূপ বোঝার জন্য ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানকে অপরিহার্য করে তোলে। এই আপাত বিরোধিতা (সাধারণ মূল কিন্তু দুর্বোধ্যতা) ভাষার গতিশীল প্রকৃতির একটি প্রমাণ।
৪.৩ মধ্য ইংরেজি (Middle English): নরম্যান বিজয় ও ফরাসি প্রভাব (আনুমানিক ১১৫০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দ)
১০৬৬ সালের নরম্যান বিজয়ের পরে মধ্য ইংরেজি উদ্ভূত হয় । এই ঘটনাটি ইংরেজি ভাষার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। নতুন শাসক শ্রেণীর ভাষা, প্রাচীন নরম্যান (ফরাসি), দ্বারা ভাষাটি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয় । প্রাচীন ইংরেজি এবং নরম্যান ফরাসি ভাষার মিশ্রণের ফলে এর ব্যাকরণ সরলীকৃত হয় এবং শব্দভাণ্ডার প্রসারিত হয় । এই সময়ে Geoffrey Chaucer এর Canterbury Tales এর মতো সাহিত্যকর্ম ভাষার এই পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে ।
৪.৪ আধুনিক ইংরেজি (Modern English): রেনেসাঁ থেকে বর্তমান (আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ-বর্তমান)
আধুনিক ইংরেজিকে দুটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা যায়:
- প্রারম্ভিক আধুনিক ইংরেজি (Early Modern English) (১৫০০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দ): রেনেসাঁসের সময়কালে এর পরিবর্তন ঘটে । এই সময়ে বানান ও ব্যাকরণের মানকীকরণ ঘটে । উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কাজ এবং কিং জেমস বাইবেলের প্রকাশ ভাষা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । অনুসন্ধান, বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কারণে ইংরেজি অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ শুরু করে ।
- পরবর্তী আধুনিক ইংরেজি (Late Modern English) (১৭০০ খ্রিস্টাব্দ-২১শ শতক): শিল্প বিপ্লব এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারের কারণে ইংরেজি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । এই সময়ে মানক অভিধান এবং ব্যাকরণগত নিয়মের উত্থান ঘটে । বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরিভাষার ব্যাপক বিস্তার ঘটে । উপনিবেশবাদ, বাণিজ্য এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাবে ভাষাটি একটি বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হয় ।
- বৈশ্বিক ইংরেজি (Global English) (২১শ শতক): আধুনিক যুগে ইংরেজি একটি বৈশ্বিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা (lingua franca) হিসেবে কাজ করে, যা বিভিন্ন মাতৃভাষার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সাধারণ মাধ্যম । ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির আবির্ভাব ভাষার বিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে, নতুন শব্দ ও অভিব্যক্তি দৈনন্দিন ব্যবহারে যুক্ত হয়েছে । এটি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রেক্ষাপটের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, কূটনীতি, ব্যবসা, বিজ্ঞান এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে এর ভূমিকা সুদৃঢ় করেছে ।
ইংরেজির এই অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতা এবং স্থিতিস্থাপকতা, যা বিভিন্ন ভাষাগত প্রভাবকে শোষণ করার মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়, এর বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের একটি মূল কারণ। প্রাচীন ইংরেজি ল্যাটিন, প্রাচীন নর্স এবং পরবর্তীতে মধ্য ইংরেজি নরম্যান ফরাসি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এই ক্রমাগত আত্মীকরণ প্রক্রিয়া, প্রতিরোধের পরিবর্তে, ইংরেজিকে তার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে এবং ব্যাকরণকে সরল করতে সাহায্য করেছে, যা এটিকে আরও নমনীয় এবং সহজলভ্য করেছে। এই অভিযোজন ক্ষমতা এর “বৈশ্বিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা” হয়ে ওঠার একটি প্রত্যক্ষ কারণ, যা একটি গভীর ভাষাগত বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে যা এর ব্যাপক গ্রহণকে সহজ করেছে।
নরম্যান বিজয়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থানের মতো প্রধান ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সরাসরি ইংরেজির ভাষাগত কাঠামো এবং বৈশ্বিক বিস্তারকে আকার দিয়েছে। নরম্যান বিজয় (১০৬৬) স্পষ্টভাবে মধ্য ইংরেজি এবং ফরাসি প্রভাবের উত্থানের সাথে যুক্ত । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার এবং পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে ইংরেজির বিশ্বব্যাপী বিস্তারের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এটিকে “বাণিজ্যের জন্য একটি প্রাথমিক ভাষা” এবং “বৈশ্বিক শক্তি” করে তুলেছে । এটি একটি স্পষ্ট কার্যকারণ শৃঙ্খল দেখায়: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা সরাসরি ভাষাগত প্রভাব এবং প্রসারের দিকে পরিচালিত করে। ভাষার বিবর্তন কেবল অভ্যন্তরীণ নয়, বরং বাহ্যিক ঐতিহাসিক শক্তির প্রত্যক্ষ ফল, যা বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার পরিবর্তনের একটি আয়না।
সারণী ১: ইংরেজি ভাষার ঐতিহাসিক পরিক্রমা: প্রধান পর্যায় ও বৈশিষ্ট্য
পর্যায় | আনুমানিক সময়কাল | মূল বৈশিষ্ট্য | প্রধান প্রভাব/ঘটনা |
প্রাচীন ইংরেজি (Old English) | ৪৫০-১১৫০ খ্রিস্টাব্দ | অ্যাংলো-স্যাক্সন নামে পরিচিত; জটিল ব্যাকরণ, বিভক্তি; মুক্ত শব্দক্রম। | জার্মানীয় বসতি স্থাপনকারী, ল্যাটিন ও প্রাচীন নর্স ভাষার প্রভাব; খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তন; Beowulf কাব্য। |
মধ্য ইংরেজি (Middle English) | ১১৫০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দ | ব্যাকরণ সরলীকরণ; শব্দভাণ্ডার প্রসারিত। | ১০৬৬ সালের নরম্যান বিজয়; নরম্যান ফরাসি ভাষার গভীর প্রভাব; Geoffrey Chaucer এর Canterbury Tales। |
প্রারম্ভিক আধুনিক ইংরেজি (Early Modern English) | ১৫০০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দ | বানান ও ব্যাকরণের মানকীকরণ। | রেনেসাঁস; উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কাজ; কিং জেমস বাইবেলের প্রকাশ; অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ। |
পরবর্তী আধুনিক ইংরেজি (Late Modern English) | ১৭০০-২১শ শতক | মানক অভিধান ও ব্যাকরণগত নিয়মের উত্থান; বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরিভাষার বিস্তার। | শিল্প বিপ্লব; ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার; উপনিবেশবাদ ও বাণিজ্য। |
বৈশ্বিক ইংরেজি (Global English) | ২১শ শতক-বর্তমান | বৈশ্বিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা; দ্রুত বিবর্তন। | ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির আবির্ভাব; কূটনীতি, ব্যবসা, বিজ্ঞান ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে সুদৃঢ় ভূমিকা। |
৫. আধুনিক বিশ্বে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব
৫.১ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও কূটনীতিতে ভূমিকা
ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত । প্রায় ৬০টিরও বেশি দেশে এটি সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় । আধুনিক ইলেকট্রনিক, টেলিযোগাযোগ ও কম্পিউটার প্রযুক্তি, বিশ্ববাণিজ্য ও কূটনীতির প্রধান ভাষা হিসেবে ইংরেজি গোটা বিশ্বের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে । এটি বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষকে সংযুক্ত করে, বৈশ্বিক আলোচনা ও অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি করে ।
৫.২ ব্যবসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রভাব
প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক খাতে ইংরেজি প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় । একাডেমিক পেপার প্রকাশ, পেটেন্ট দাখিল এবং বৈশ্বিক সম্মেলনে যুগান্তকারী আবিষ্কার ভাগ করে নেওয়ার জন্য এটি প্রাথমিক মাধ্যম । বহুজাতিক সংস্থাগুলিতে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এবং ক্লায়েন্ট সম্পর্কের জন্য ইংরেজি অপরিহার্য । বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করতে ইংরেজি জানা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । ব্যবসা, বিজ্ঞান, শিক্ষা, বিনোদন সহ বিভিন্ন খাতে ইংরেজির ব্যাপক প্রভাব বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের একটি স্ব-পুনর্নিরীক্ষণ চক্র তৈরি করে, যা আধুনিক অগ্রগতির জন্য এটিকে অপরিহার্য করে তোলে। এটি কেবল তথ্যের একটি তালিকা নয়; এটি দেখায় যে কীভাবে একটি খাতে ইংরেজির উপযোগিতা (যেমন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা) সম্পর্কিত অন্যান্য খাতে (যেমন, একাডেমিক প্রকাশনা, আন্তর্জাতিক সম্মেলন) এর ব্যবহারকে অপরিহার্য করে তোলে, যা ফলস্বরূপ শিক্ষা এবং পেশাদার বিকাশে এর গ্রহণকে চালিত করে। এটি একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লুপ তৈরি করে: ইংরেজি যত বেশি ব্যবহৃত হয়, তত বেশি অপরিহার্য হয়ে ওঠে, যা এর “লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা” অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে।
৫.৩ শিক্ষা ও গবেষণায় অপরিহার্যতা
ইংরেজি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অধীত দ্বিতীয় ভাষা । বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা, আন্তর্জাতিক শিক্ষাবৃত্তি এবং গবেষণা খাতে কাজ করতে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে । অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে কোর্স এবং প্রোগ্রাম অফার করে । ইংরেজিতে দক্ষতা বিপুল পরিমাণ একাডেমিক সম্পদ এবং জ্ঞান অ্যাক্সেস করার সুযোগ দেয়, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণা এবং সর্বশেষ প্রবণতা সম্পর্কে আপডেট থাকতে সাহায্য করে ।
৫.৪ সংস্কৃতি ও বিনোদনে প্রভাব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিনোদন শিল্পের আধিপত্যের কারণে ইংরেজি বিশ্বব্যাপী বিনোদনের ভাষা হয়ে উঠেছে । ইংরেজি সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু অ্যাক্সেস করা যায় । এটি বিভিন্ন সংস্কৃতিকে বুঝতে এবং আরও উদারমনা হতে সাহায্য করে । অনেক দেশে ইংরেজি ভাষার সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠানে ডাবিং না করার ফলে মানুষ সহজেই ভাষাটি রপ্ত করতে পারে ।
৫.৫ কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত উন্নয়নে সুবিধা
ইংরেজি দক্ষতা কর্মজীবনের সম্ভাবনা বাড়ায়, উন্নত চাকরির সুযোগ এবং পদোন্নতির দিকে পরিচালিত করে । এটি আন্তর্জাতিক ভূমিকা এবং বিদেশে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে । ইংরেজিতে দক্ষতা যোগাযোগ দক্ষতা এবং নেটওয়ার্কিং উন্নত করে, যা পেশাদার সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক । ভ্রমণকে সহজ করে, সাইন, মেনু বুঝতে এবং স্থানীয়দের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে । সামাজিক ও পেশাগত পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যা মিটিং বা উপস্থাপনায় সক্রিয় অংশগ্রহণে সহায়ক । উপরন্তু, দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখা জ্ঞানীয় দক্ষতা উন্নত করে, যেমন স্মৃতিশক্তি, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং মানসিক নমনীয়তা । ইংরেজিতে দক্ষতা ব্যক্তিগতভাবে উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে, এটিকে নিছক একটি ভাষাগত দক্ষতা থেকে ব্যক্তিগত ও পেশাদার গতিশীলতা এবং বৈশ্বিক জ্ঞানে প্রবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতাতে রূপান্তরিত করে। বিপুল পরিমাণ তথ্য অ্যাক্সেস করার ক্ষমতা, উন্নত চাকরি সুরক্ষিত করা, এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নেভিগেট করার ক্ষমতা বোঝায় যে ইংরেজি দক্ষতা ব্যক্তিদের জন্য একটি কৌশলগত সম্পদ, যা তাদের আর্থ-সামাজিক সুযোগ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধিকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
৬. ইংরেজি ভাষার বৈশ্বিক অবস্থান ও পরিসংখ্যান
৬.১ বিশ্বে ইংরেজি ভাষার ক্রমিক অবস্থান ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা
ইংরেজি ভাষার বৈশ্বিক অবস্থান বিভিন্ন পরিসংখ্যান দ্বারা পরিমাপ করা যায়:
- মাতৃভাষী: প্রায় ৩৭.১ কোটি থেকে ৩৮ কোটি মানুষের মাতৃভাষা ইংরেজি। মাতৃভাষাভাষীর সংখ্যার বিচারে এর অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় ।
- দ্বিতীয় ভাষা ব্যবহারকারী: প্রায় ৬১.১ কোটি থেকে ৭৫ কোটি মানুষ দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যবহার করে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহারকারীর সংখ্যার বিচারে এর অবস্থান বিশ্বে প্রথম ।
- মোট ব্যবহারকারী: ২০১৯ সালের এথনোলগ (২২তম সংস্করণ) অনুযায়ী, ইংরেজি ভাষার মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৮.৩ কোটি । তবে, কিছু উৎস প্রায় ১৫০ কোটি থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন বা ১.৭৫ বিলিয়ন ব্যবহারকারীর কথা উল্লেখ করে। মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী এর অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয় বা প্রথম । মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় এই ভিন্নতা বিশ্বব্যাপী ভাষার ব্যবহার সঠিকভাবে পরিমাপ করার অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ নির্দেশ করে, যার জন্য সতর্ক উৎস নির্বাচন এবং ডেটা ভিন্নতার স্বীকৃতি প্রয়োজন। এই উল্লেখযোগ্য পরিসর ভাষা ব্যবহারকারীদের গণনা করার পদ্ধতিগত অসুবিধাগুলিকে তুলে ধরে (যেমন, “ব্যবহারকারী” কে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, নিষ্ক্রিয় বোঝার অন্তর্ভুক্তি, বিভিন্ন সমীক্ষা পদ্ধতি এবং আপডেটের ফ্রিকোয়েন্সি)। এই ভিন্নতা স্বীকার করা একাডেমিক কঠোরতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ডেটার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে একটি সমালোচনামূলক বোঝাপড়া প্রদর্শন করে, কেবল একটি একক, সম্ভাব্য বিভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করার পরিবর্তে।
সারণী ২: বিশ্বে শীর্ষ ব্যবহৃত ভাষাগুলোর তালিকা (Ethnologue 2019, ২২তম সংস্করণ অনুযায়ী)
ক্রম | ভাষা | ভাষা পরিবার | মাতৃভাষীর সংখ্যা | মাতৃভাষীর সংখ্যা অনুযায়ী ক্রম | দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা | দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুযায়ী ক্রম | মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা |
১ | ম্যান্ডারিন চীনা | চীনা-তিব্বতি, চৈনিক | ৮৯.৭ কোটি | ১ | ১৯.৩ কোটি | ৪ | ১০৯ কোটি |
২ | ইংরেজি | ইন্দো-ইউরোপীয়, জার্মানীয় | ৩৭.১ কোটি | ৩ | ৬১.১ কোটি | ১ | ৯৮.৩ কোটি |
৩ | হিন্দুস্তানি (হিন্দি/উর্দু) | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-আর্য | ৩২.৯ কোটি | ৪ | ২১.৫ কোটি | ২ | ৫৪.৪ কোটি |
৪ | স্পেনীয় | ইন্দো-ইউরোপীয়, রোমান্স | ৪৩.৬ কোটি | ২ | ৯.১ কোটি | ৮ | ৫২.৭ কোটি |
৫ | আরবি | আফ্রো-এশীয়, সেমীয় | ২৯ কোটি (২০১৭) | ৫ | ১৩.২ কোটি | ৬ | ৪২.২ কোটি |
৬ | মালয় | অস্ট্রোনেশীয়, মালয়-পলিনেশীয় | ৭.৭ কোটি (২০০৭) | ১৫ | ২০.৪ কোটি | ৩ | ২৮.১ কোটি |
৭ | বাংলা | ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-আর্য | ২২.৮৩ কোটি | ৬ | ৩.৬৭ কোটি | ১৩ | ২৬.১ কোটি |
৮ | রুশ | ইন্দো-ইউরোপীয়, স্লাভীয় | ১৫.৩ কোটি | ৮ | ১১.৩ কোটি (২০১০) | ৭ | ২৬.৭ কোটি |
৯ | পর্তুগিজ | ইন্দো-ইউরোপীয়, রোমান্স | ২১.৮ কোটি | ৭ | ১.১ কোটি | ১৫ | ২২.৯ কোটি |
১০ | ফরাসি | ইন্দো-ইউরোপীয়, রোমান্স | ৭.৬ কোটি | ১৭ | ১৫.৩ কোটি | ৫ | ২২.৯ কোটি |
৬.২ দেশ ও অঞ্চলে ব্যবহার
ইংরেজি প্রায় ৫২টি দেশের জাতীয় বা সরকারি ভাষা , এবং ৬০টিরও বেশি দেশে সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় । পৃথিবীর মোট ১৪৬টি দেশে ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষ পাওয়া যায় । এটি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অনেক ক্যারিবীয় দেশে প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত । এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও অনেক আফ্রিকান দেশে ইংরেজি সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ।
অ-মাতৃভাষী দেশগুলির মধ্যে ইংরেজি দক্ষতায় শীর্ষ ১০টি দেশ হলো নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, ক্রোয়েশিয়া, পর্তুগাল, গ্রীস, অস্ট্রিয়া এবং জার্মানি । এই দেশগুলির শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমে ইংরেজির ব্যাপক ব্যবহার তাদের দক্ষতার মূল উৎস । অ-মাতৃভাষী দেশগুলিতে ইংরেজির এই ব্যাপক গ্রহণ ইঙ্গিত দেয় যে কার্যকর ইংরেজি শিক্ষা এবং মিডিয়া এক্সপোজার একটি জাতির বিশ্বায়িত বিশ্বে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক একীকরণকে প্রভাবিত করে। এটি ইংরেজি শিক্ষা/এক্সপোজারে জাতীয় বিনিয়োগ এবং একটি দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসা, পর্যটন এবং বৈশ্বিক অংশগ্রহণের জন্য ইংরেজিকে কাজে লাগানোর ক্ষমতার মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বোঝায়। এর বৃহত্তর তাৎপর্য হলো যে ইংরেজি দক্ষতা কেবল একটি ব্যক্তিগত দক্ষতা নয়, বরং একটি জাতীয় সম্পদ, যা একটি দেশের প্রতিযোগিতা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপে একীকরণকে প্রভাবিত করে।
৬.৩ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও অধীত ভাষা হিসেবে অবস্থান
বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশই ইংরেজিভাষী । আধুনিক যোগাযোগে ও বিভিন্ন পেশায় ইংরেজির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অধীত দ্বিতীয় ভাষা । যদিও ইংরেজি মাতৃভাষী বক্তাদের সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে , এটি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে প্রথম স্থানে রয়েছে এবং “সবচেয়ে বেশি অধীত দ্বিতীয় ভাষা” । উপরন্তু, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৩৫% ইংরেজিভাষী । এটি ইংরেজিভাষী সম্প্রদায়ের বাইরেও ইংরেজির জন্য একটি শক্তিশালী কার্যকরী চাহিদা নির্দেশ করে। কার্যকারণ সম্পর্কটি হলো যে বৈশ্বিক যোগাযোগ, প্রযুক্তি এবং তথ্য অ্যাক্সেসে এর উপযোগিতা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে এর গ্রহণকে চালিত করে, যা ফলস্বরূপ বৈশ্বিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে এর অবস্থানকে শক্তিশালী করে। এই প্রবণতা দেখায় যে ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা, কেবল মাতৃভাষী বক্তাদের সংখ্যা নয়, এর চলমান বৈশ্বিক প্রভাবের প্রধান চালিকা শক্তি।
৭. উপসংহার
ভাষা মানবজাতির এক অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য, যা চিন্তা, যোগাযোগ এবং সংস্কৃতির ভিত্তি । এটি আদিম আকার-ইঙ্গিত থেকে বিবর্তিত হয়ে আজকের জটিল রূপ লাভ করেছে । ইংরেজি ভাষা, জার্মানীয় উপভাষা থেকে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা (যেমন নরম্যান বিজয়) এবং ভাষাগত অভিযোজন ক্ষমতার কারণে একটি বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে । এর শব্দভাণ্ডার ও ব্যাকরণ বিভিন্ন ভাষার প্রভাবে সমৃদ্ধ ও সরল হয়েছে ।
আধুনিক বিশ্বে ইংরেজি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, ব্যবসা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, কূটনীতি এবং বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে এক অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে । যদিও মাতৃভাষী বক্তার সংখ্যার দিক থেকে এটি শীর্ষে নয়, তবে বিপুল সংখ্যক দ্বিতীয় ভাষা ব্যবহারকারীর কারণে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে ।
ডিজিটাল যোগাযোগ এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে ইংরেজি ভাষার বিবর্তন অব্যাহত থাকবে। নতুন শব্দ এবং অভিব্যক্তি প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে, যা এর গতিশীল প্রকৃতিকে প্রমাণ করে । এটি ইঙ্গিত দেয় যে ইংরেজি একটি স্থির সত্তা নয় বরং প্রযুক্তিগত এবং সামাজিক বিকাশের প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তিত হতে থাকে। এর প্রাসঙ্গিকতা এর অব্যাহত অভিযোজন ক্ষমতা এবং নতুন ভাষাগত ঘটনাগুলিকে শোষণের উপর নির্ভর করে, যা এর অধ্যয়নকে একটি চলমান এবং গতিশীল ক্ষেত্র করে তোলে। একটি বৈশ্বিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে ইংরেজি তার প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখবে, যা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।
এই প্রতিবেদনটি জোর দেয় যে ভাষা, বিশেষ করে ইংরেজির মতো একটি বৈশ্বিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা, সংযোগ এবং প্রতিযোগিতা উভয়ের জন্যই একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে ব্যক্তিগত ভাগ্য এবং জাতীয় গতিপথকে আকার দেয়। পুরো প্রতিবেদন জুড়ে, ইংরেজিকে “বৈশ্বিক যোগাযোগ” , “কর্মজীবনের অগ্রগতি” , “তথ্যে প্রবেশাধিকার” , এবং “আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা” সহজ করতে দেখানো হয়েছে। এটি প্রকাশ করে যে ভাষা কেবল একটি নিরপেক্ষ মাধ্যম নয় বরং একটি সক্রিয় শক্তি। এটি মানুষ এবং সংস্কৃতিকে সংযুক্ত করে, তবে অর্থনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসাবেও কাজ করে। একবিংশ শতাব্দীতে ব্যক্তি ও জাতির জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন কর্মজীবন, শিক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণের জন্য একটি অপরিহার্য চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হবে ।