a summary of Francis Bacon’s essay “Of Studies” in Bengali, presented as a story:
অফ স্টাডিজ (অধ্যয়ন প্রসঙ্গে) – ফ্রান্সিস বেকন
ফ্রান্সিস বেকনের বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘অফ স্টাডিজ’ যেন একটি ছোট, বুদ্ধিদীপ্ত নির্দেশিকা, যা পড়াশোনা বা অধ্যয়নের বিভিন্ন উদ্দেশ্য, উপকারিতা এবং সঠিক পদ্ধতি নিয়ে কথা বলে। বেকন তার নিজস্ব সংক্ষিপ্ত এবং প্রবাদতুল্য ভঙ্গিতে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
গল্পটি যেন তিন ধরনের মানুষ এবং তাদের অধ্যয়নের সম্পর্ক নিয়ে শুরু হয়। বেকন বলেন, মানুষের অধ্যয়নের তিনটি প্রধান উদ্দেশ্য থাকা উচিত:
১. আনন্দ বা বিনোদন: কেউ কেউ বই পড়েন কেবল আনন্দের জন্য, অবসর সময়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে। এটা এক ধরনের পালানো, যেখানে পড়াটা শুধুই সময় কাটানো বা মনের খোরাক যোগানোর জন্য। ২. সাজসজ্জা বা অলঙ্করণ: অনেকে পড়াশোনা করেন নিজেদের জ্ঞান জাহির করার জন্য, তর্ক-বিতর্কে নিজেদের স্মার্ট প্রমাণ করতে বা লোকজনের সামনে বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলতে। তাদের পড়াশোনার মূল লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন নয়, বরং সামাজিক প্রদর্শনী। ৩. দক্ষতা বা সামর্থ্য: কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো জীবনের ব্যবহারিক কাজে জ্ঞান প্রয়োগ করা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং যেকোনো সমস্যা সমাধান করা। বেকন মনে করেন, এটিই অধ্যয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্য – বাস্তব জীবনে দক্ষতা বাড়ানো।
বেকন এরপর বলেন যে, অতিরিক্ত পড়াশোনা করলে মানুষ অলস হয়ে যায়। শুধুমাত্র বই পড়ে সময় কাটালে বাস্তব জগৎ থেকে দূরে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার, কেবল পড়াশোনা করে সিদ্ধান্ত নিলে তা পণ্ডিতসুলভ হতে পারে, কিন্তু বাস্তব বুদ্ধির অভাব থাকতে পারে। তার মতে, বিচক্ষণতা এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া অধ্যয়নের গভীর জ্ঞান বাস্তবে কাজে আসে না।
তিনি বিভিন্ন ধরনের বই বা অধ্যয়নের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন:
- কিছু বই: তিনি বলেন, “কিছু বই আস্বাদন করার জন্য, কিছু গিলবার জন্য, আর কিছু চিবিয়ে হজম করার জন্য।” এর মানে হলো, কিছু বই হালকাভাবে পড়তে হয়, কিছু তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলতে হয়, আর কিছু বইকে গভীর মনোযোগ দিয়ে, বারবার পড়ে তার মর্মার্থ অনুধাবন করতে হয়।
- সাধারণ ইতিহাস ও দর্শন: ইতিহাস মানুষকে জ্ঞানী করে তোলে, কাব্য মানুষকে কল্পনাপ্রবণ করে, গণিত বুদ্ধিকে তীক্ষ্ণ করে, দর্শন গভীর চিন্তা শেখায়, নৈতিকতা মানুষকে গম্ভীর করে এবং অলঙ্কারশাস্ত্র বিতর্ক-দক্ষতা বাড়ায়। প্রতিটি বিষয়ই মানুষের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট ক্ষমতাকে বিকশিত করে।
বেকন আরও বলেন যে, যারা জন্মগতভাবে প্রতিভাবান, তাদের জন্য বই পড়া অনেকটা গাছের ডালপালা ছাঁটার মতো – যা তাদের বাড়তি কিছু যোগ করে না, বরং যা আছে তাকে আরও পরিমার্জিত করে। আর যারা অতটা প্রতিভাবান নন, তাদের জন্য বই পড়া এক ধরনের প্রশিক্ষণ, যা তাদের ঘাটতিগুলো পূরণ করতে সাহায্য করে।
শেষ অংশে বেকন অধ্যয়নের একটি চমৎকার উপমা দেন। তিনি বলেন, যেমনভাবে শরীরের বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন ব্যায়াম আছে, তেমনি মনের বিভিন্ন দুর্বলতার জন্য বিভিন্ন ধরনের পড়াশোনা আছে। উদাহরণস্বরূপ:
- যদি কারো মন বিক্ষিপ্ত হয় বা মনোযোগের অভাব থাকে, তবে তার গণিত পড়া উচিত, কারণ গণিত মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
- যদি কেউ সহজে ভুল ধরতে না পারে, তবে তাকে বিতর্ক বা আইনশাস্ত্র পড়তে হবে, কারণ এই বিষয়গুলো সুক্ষ্ম পার্থক্য বুঝতে শেখায়।
- যদি কেউ একটি বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অন্য বিষয়ে চলে যায়, তবে তাকে দর্শন পড়তে হবে, যা সুসংহত চিন্তাভাবনা শেখায়।
বেকন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, একজন বিচক্ষণ ব্যক্তির জন্য পড়াশোনা হলো কেবল নির্দেশিকা, যা অভিজ্ঞতার দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে। একজন অভিজ্ঞ মানুষ তার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কিন্তু একজন পড়াশোনা করা মানুষ সঠিক নির্দেশনা পেলেও, অভিজ্ঞতা না থাকলে সে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারে না।
সংক্ষেপে, ‘অফ স্টাডিজ’ প্রবন্ধটি পড়াশোনার বহুমুখী দিক, এর ব্যবহারিক গুরুত্ব এবং জীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য এর প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। এটি শেখায় যে পড়াশোনা শুধু জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়, বরং জীবনকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার।