কণ্ঠধ্বনি বলতে মুখগহ্বর, কণ্ঠ, নাসিকা ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগ্যন্ত্রের দ্বারা। গলনালি, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, দন্ত, নাসিকা ইত্যাদি বাক্প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বলে বাগযন্ত্র। এই বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে।
ভাষা হলো মানুষের যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য মানুষ বাকযন্ত্রের সাহায্যে যেসব অর্থবোধক ধ্বনি উচ্চারণ করে, তাকে ভাষা বলে।
ভাষার উৎপত্তি
ভাষার উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। কিছু তত্ত্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ঈশ্বরিক তত্ত্ব: প্রাচীনকালে অনেকেই বিশ্বাস করতেন যে ভাষা ঈশ্বরের দান।
- প্রাকৃতিক তত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ভাষার উৎপত্তি প্রাকৃতিক ধ্বনি থেকে হয়েছে। যেমন, পশুপাখির ডাক বা প্রাকৃতিক শব্দ।
- সামাজিক তত্ত্ব: ভাষার উৎপত্তি মানুষের সামাজিক প্রয়োজন থেকে হয়েছে বলে মনে করা হয়। মানুষের মধ্যে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা থেকেই ভাষার বিকাশ।
ভাষার বৈশিষ্ট্য
ভাষার কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
- অর্থবোধকতা: ভাষার প্রতিটি শব্দের একটি নির্দিষ্ট অর্থ থাকে।
- প্রতীকী: ভাষা প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেখানে শব্দগুলি নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে।
- পরিবর্তনশীলতা: সময়ের সাথে সাথে ভাষার পরিবর্তন ঘটে।
- সামাজিকতা: ভাষা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ভাষার প্রকারভেদ
ভাষা প্রধানত দুই প্রকার:
- মৌখিক ভাষা: যে ভাষার কোন লিখন ব্যবস্থা নেই, সেই ভাষাকে মৌখিক ভাষা বলা হয়।
- লিখিত ভাষা: যে ভাষার মধ্যে লিখন ব্যবস্থা রয়েছে, সেই ভাষাকে লিখিত ভাষা বলা হয়।
ভাষার ইতিহাস
ভাষার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে মেসোপটেমিয়া, মিশর, এবং সিন্ধু সভ্যতায় ভাষার ব্যবহার দেখা যায়। প্রাচীনকালে ভাষার লিখিত রূপ ছিল না, তাই মৌখিক ভাষার মাধ্যমেই যোগাযোগ করা হতো। পরবর্তীতে লিখন ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে এবং ভাষার লিখিত রূপ বিকশিত হয়।
ভাষা কাকে বলে?
ভাষা হলো মানুষের মধ্যে ভাব, অনুভূতি, এবং তথ্য বিনিময়ের একটি প্রধান মাধ্যম। এটি শব্দ, বাক্য, বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। ভাষা মৌখিক, লিখিত, বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে হতে পারে।
ভাষার সংজ্ঞা:
- ভাষা হলো একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি যা মানুষ ব্যবহার করে তাদের চিন্তা, ধারণা, এবং অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে।
- ভাষা ধ্বনি, শব্দ, এবং বাক্যের মাধ্যমে গঠিত একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা।
ভাষার উৎপত্তি
ভাষার উৎপত্তি নিয়ে মানুষের কৌতূহল বহু পুরাতন। ভাষা কীভাবে এবং কখন সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব ও ব্যাখ্যা রয়েছে।
১. ঈশ্বরের দান তত্ত্ব (Divine Origin Theory):
অনেক ধর্মীয় বিশ্বাসে ভাষা ঈশ্বরের দ্বারা প্রদত্ত বলে বিবেচিত হয়। যেমন, বাইবেলে বলা হয়েছে যে ঈশ্বর প্রথম মানুষ আদমকে ভাষার উপহার দেন।
২. অনুকরণ তত্ত্ব (Imitation Theory):
এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রাচীন মানুষ প্রকৃতির ধ্বনি অনুকরণ করে ভাষার সূচনা করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, পাখির ডাক বা নদীর শব্দ থেকে ভাষার উদ্ভব।
৩. উচ্চারণ তত্ত্ব (Sound-Origin Theory):
অনেকে মনে করেন, ভাষার উৎপত্তি মানুষের স্বাভাবিক উচ্চারণ বা অনুভূতির ধ্বনি থেকে হয়েছে, যেমন: আনন্দে ‘আহা’ বা ব্যথায় ‘উফ’।
৪. সামাজিক চাহিদা তত্ত্ব (Social Need Theory):
মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের প্রয়োজন থেকে ভাষার উদ্ভব ঘটে। একে বলা হয় সহযোগিতা তত্ত্ব।
৫. জিনগত বিবর্তন তত্ত্ব (Genetic Evolution Theory):
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তনের ফলে ভাষা বিকশিত হয়। মানুষের মস্তিষ্ক এবং শারীরিক গঠন ভাষা ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
ভাষার ইতিহাস
১. প্রাক-ইতিহাসে ভাষা:
প্রথম ভাষার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আনুমানিক ৫০,০০০ বছর আগে হোমো সেপিয়েন্সরা ভাষা ব্যবহার শুরু করেছিল।
২. প্রাচীন ভাষাগুলি:
- সংস্কৃত (Sanskrit): ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহৃত একটি প্রাচীন ভাষা।
- ল্যাটিন (Latin): রোমান সাম্রাজ্যের সরকারি ভাষা।
- গ্রিক (Greek): প্রাচীন গ্রিসের ভাষা।
- মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ান: প্রথম লিখিত ভাষাগুলির মধ্যে একটি।
৩. লিখিত ভাষার উদ্ভব:
প্রথম লিখিত ভাষা সুমেরিয়ান লিপি (Cuneiform) হিসেবে চিহ্নিত। এটি আনুমানিক ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়ায় ব্যবহার হতো।
৪. আধুনিক ভাষার বিকাশ:
আধুনিক ভাষাগুলি বিভিন্ন প্রাচীন ভাষার বিবর্তনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি ভাষা মূলত প্রাচীন জার্মানিক এবং ল্যাটিন ভাষা থেকে উদ্ভূত।
ভাষার গুরুত্ব
- যোগাযোগের মাধ্যম: ভাষা ছাড়া মানবজাতির উন্নয়ন অসম্ভব।
- সংস্কৃতির বাহক: প্রতিটি ভাষা একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতির পরিচায়ক।
- জ্ঞান এবং শিক্ষা: ভাষার মাধ্যমে জ্ঞান সংরক্ষণ এবং বিতরণ করা হয়।
- ব্যক্তিত্ব প্রকাশ: ভাষা মানুষের চিন্তা এবং অনুভূতি প্রকাশের জন্য অপরিহার্য।
ভাষা সম্পর্কিত মজার তথ্য
- পৃথিবীতে প্রায় ৭,১০০টি ভাষা রয়েছে।
- সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলে ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায়।
- ভাষার মধ্যেই সবচেয়ে বড় শব্দভাণ্ডার ইংরেজি ভাষায়।
- বাংলা ভাষা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা।
ভাষা কাকে বলে?
ভাষা হলো মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ ধারণা, ভাবনা, অনুভূতি এবং তথ্যকে শব্দ, বাক্য এবং লিখিত প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং বিনিময় করে। ভাষা শুধুমাত্র মানুষের জন্যই নিজস্ব নয়, এটি মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে।
ভাষার উৎপত্তি এবং ইতিহাস:
ভাষার সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। তবে বিভিন্ন তত্ত্ব এবং প্রমাণের ভিত্তিতে কিছু ধারণা করা যায়:
- প্রাচীনতম ভাষা: প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বা ১ লক্ষ বছর আগে মানুষ প্রথম ভাষা ব্যবহার করেছিল। আফ্রিকার মানুষেরাই সর্বপ্রথম ভাষার ব্যবহার করেছিল বলে অনুমান করা হয়।
- ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা: আনুমানিক ৪০০০ থেকে ১০০০ বছর আগে প্রোটো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় কথা বলা মধ্য-এশিয়ার জনগোষ্ঠী পশ্চিম আর পূর্বদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, আর তাদের ভাষাও বিভিন্ন শাখার সৃষ্টি করে। এরই একটি শাখা হলো ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠী। আর ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা ইন্দো-আর্য বা ভারতীয়-আর্য ভাষা। 1
- বাংলা ভাষার উৎপত্তি: বাংলা ভাষা ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা। মাগধী প্রাকৃত এবং পালি ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে। কালক্রমে আরবি, ফার্সি, পর্তুগিজ এবং ইংরেজি ভাষার প্রভাবে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে।
ভাষার বিভিন্ন দিক:
- ধ্বনি: ভাষার সবচেয়ে ছোট একক হলো ধ্বনি। বিভিন্ন ধ্বনির মিলন ঘটিয়ে শব্দ তৈরি হয়।
- শব্দ: ধ্বনির একটি নির্দিষ্ট সমন্বয়কে শব্দ বলে। প্রতিটি শব্দের একটি নির্দিষ্ট অর্থ থাকে।
- বাক্য: এক বা একাধিক শব্দের সমন্বয়ে বাক্য গঠিত হয়। বাক্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করি।
- ব্যাকরণ: ভাষার ব্যবহারের নিয়মকে ব্যাকরণ বলে। ব্যাকরণের মাধ্যমে আমরা শব্দ এবং বাক্যকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখি।
ভাষার গুরুত্ব:
- যোগাযোগ: ভাষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো যোগাযোগ। এর মাধ্যমে আমরা অন্যের সাথে মতবিনিময় করি, তথ্য আদান-প্রদান করি এবং সম্পর্ক গড়ে তুলি।
- চিন্তাভাবনা প্রকাশ: ভাষার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের ভাবনা, অনুভূতি এবং ধারণাকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।
- জ্ঞান আহরণ: পড়াশোনা, গবেষণা এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ভাষা একটি অপরিহার্য হাতিয়ার।
- সভ্যতার বিকাশ: ভাষার মাধ্যমে সভ্যতা বিকশিত হয়, সংস্কৃতি প্রচারিত হয় এবং মানব সমাজের উন্নতি ঘটে।
উপসংহার:
ভাষা হলো মানব সভ্যতার মূল ভিত্তি। এটি আমাদেরকে অন্যের সাথে যুক্ত করে এবং আমাদেরকে মানব হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। ভাষার ইতিহাস এবং উৎপত্তি সম্পর্কে আরও গবেষণা করে আমরা নিজেদের ভাষার প্রতি আরও ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা অনুভব করতে পারি।
ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য নিচে ফ্যাক্টসহ বিশ্লেষণ করা হলো:
১. বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের মাধ্যম
ইংরেজি একটি গ্লোবাল ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় ১৯৭টি দেশ ইংরেজি ব্যবহার করে।
- ফ্যাক্ট: বিশ্বের ৭৫টি দেশের অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি এবং প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মানুষ ইংরেজি বলতে পারে।
২. শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি
বিশ্বের অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, এবং এমআইটি, ইংরেজিতে শিক্ষা প্রদান করে।
- ফ্যাক্ট: প্রতি বছর আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ৯০% এর বেশি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করার জন্য আবেদন করে।
৩. কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার
বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করতে বা আন্তর্জাতিক ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে ইংরেজি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ফ্যাক্ট: গ্লোবাল মার্কেটের প্রায় ৫৫% ব্যবসায়িক চুক্তি ইংরেজি ভাষায় সম্পন্ন হয়।
৪. ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি
ইন্টারনেটে থাকা তথ্যের ৫৫% এর বেশি ইংরেজিতে। বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম যেমন গুগল, ইউটিউব, এবং উইকিপিডিয়া ইংরেজিতে তাদের মূল কন্টেন্ট প্রকাশ করে।
- ফ্যাক্ট: প্রতি বছর ৪০ লাখের বেশি ইংরেজি ভাষার কন্টেন্ট অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
৫. ভ্রমণের ক্ষেত্রে সহায়ক
যেকোনো দেশ ভ্রমণ করার সময় যোগাযোগের জন্য ইংরেজি অন্যতম মাধ্যম।
- ফ্যাক্ট: বিশ্বের ৫৯টি দেশ ইংরেজিকে অফিসিয়াল বা প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে, যা পর্যটকদের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
৬. সাংস্কৃতিক বিনিময়
বিশ্বের বড় বড় সাহিত্য, সিনেমা, এবং সঙ্গীত ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংস্কৃতির আদান-প্রদান বাড়ায়।
- ফ্যাক্ট: বিশ্বের ৮০% আন্তর্জাতিক সিনেমা এবং ৭০% সঙ্গীত ইংরেজিতে তৈরি হয়।
উপসংহার
ইংরেজি শুধু একটি ভাষা নয়, এটি একটি বিশ্বব্যাপী সংযোগের সেতু। শিক্ষাগত, পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে উন্নতির জন্য ইংরেজি শেখা অপরিহার্য।