পর্যায় সারণির ইতিহাস: এক নজরে

Table of Contents

পর্যায় সারণির ইতিহাস: এক নজরে

পর্যায় সারণি, রসায়নবিদ্যার এই অপরিহার্য সহায়িকা, একদিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস, অনেক বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণা। চলুন, এই ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ দেখে নেওয়া যাক:

প্রাথমিক প্রচেষ্টা:

  • ত্রয়ী সূত্র (Dobereiner’s Triads): ১৮১৭ সালে, জার্মান রসায়নবিদ Johann Wolfgang Döbereiner লক্ষ্য করেন যে, কিছু মৌল ত্রয়ী (triads) আকারে এমনভাবে সাজানো যায় যেখানে মধ্যবর্তী মৌলটির ভর অন্য দুটি মৌলের ভরের গড়। তিনি একে ত্রয়ী সূত্র বলেন।

  • অষ্টক সূত্র (Law of Octaves): ১৮৬৫ সালে, ইংরেজ রসায়নবিদ John Newlands মৌলগুলোকে পরমাণু ভর অনুসারে সাজিয়ে দেখতে পান যে, প্রতি আটটি মৌল পরে পরে একই ধরনের রাসায়নিক ধর্ম ফিরে আসে। তিনি একে অষ্টক সূত্র নাম দেন।

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি:

  • ১৮৬৯ সালে, রুশ রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলিফ ৬৩ টি জ্ঞাত মৌলকে পরমাণু ভর অনুসারে সাজিয়ে একটি সারণি তৈরি করেন।
  • তিনি লক্ষ্য করেন যে, এভাবে সাজালে মৌলগুলোর ধর্ম একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পুনরাবৃত্তি হয়।
  • মেন্ডেলিফ তার সারণিতে কিছু খালি স্থান রেখে দিয়েছিলেন যেখানে তখনও অজানা মৌলগুলো থাকবে বলে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
  • মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি আধুনিক পর্যায় সারণির ভিত্তি স্থাপন করে।

আধুনিক পর্যায় সারণি:

  • মোসলের অবদান: ১৯১৩ সালে, ইংরেজ পদার্থবিদ Henry Moseley মৌলের পরমাণু সংখ্যা নির্ণয় করেন এবং দেখান যে, পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে পরমাণু সংখ্যা অনুসারে সাজানো উচিত।
  • সিবর্গের অবদান: Glenn T. Seaborg অ্যাক্টিনাইড শ্রেণীর মৌলগুলো আবিষ্কার করেন এবং পর্যায় সারণিতে f-ব্লক যুক্ত করেন।

উপসংহার:

পর্যায় সারণি একটি ক্রমবর্ধমান ও গতিশীল বিষয়। নতুন নতুন মৌল আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এটি আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই সারণি রসায়নবিদ্যার একটি অপরিহার্য অংশ এবং এটি আমাদের মৌল ও তাদের ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে সাহায্য করে।

পর্যায় সারণির ইতিহাস: আরও কিছু তথ্য

আগের আলোচনার সাথে আরও কিছু তথ্য যোগ করলে পর্যায় সারণির ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও সমৃদ্ধ হবে:

অন্তর্বর্তী উন্নয়ন:

  • অ্যান্টোইন লাভয়সিয়ে: ১৭৮৯ সালে, লাভয়সিয়ে প্রথম মৌলের একটি তালিকা প্রকাশ করেন। তিনি মৌলগুলোকে ধাতু, অধাতু, এবং “মৃৎ” (earths) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেন।

  • জ্যাকব বার্জেলিয়াস: পরমাণু ভর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, যা পরবর্তীতে মৌলগুলোকে সঠিকভাবে সাজাতে সাহায্য করেছিল।

  • জুলিয়াস লোথার মেয়ার: ১৮৬৪ সালে, মেয়ার একটি পর্যায় সারণি প্রকাশ করেন যেখানে ২৮ টি মৌলকে যোজনী অনুসারে সাজানো ছিল।

মেন্ডেলিফের অবদানের গুরুত্ব:

  • মেন্ডেলিফ শুধু মৌলগুলোকে সাজাননি, বরং তিনি অজানা মৌলের ধর্ম সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা পরে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল।

  • উদাহরণস্বরূপ, তিনি “একা-সিলিকন” নামক একটি মৌলের অস্তিত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা পরে জার্মেনিয়াম হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছিল।

বিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন:

  • রেডিওঅ্যাক্টিভ মৌল: রেডিওঅ্যাক্টিভ মৌলের আবিষ্কার পর্যায় সারণিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।

  • কৃত্রিম মৌল: বিজ্ঞানীরা নতুন কৃত্রিম মৌল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা পর্যায় সারণির আকার আরও বৃদ্ধি করেছে।

উপসংহার:

পর্যায় সারণির ইতিহাস একটি দীর্ঘ ও মনোমুগ্ধকর যাত্রা। এটি বিজ্ঞানের অগ্রগতির একটি প্রমাণ এবং আমাদের মৌল ও রসায়ন সম্পর্কে ধারণার ক্রমবিকাশের একটি চমৎকার উদাহরণ।

ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণীবিভাগ

এই অংশে মূলত আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে মৌলগুলোকে তাদের ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে পর্যায় সারণিতে সাজানো হয়েছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • ইলেকট্রন বিন্যাস:

    • প্রতিটি পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে (shell) এবং উপশক্তিস্তরে (subshell) থাকে।
    • ইলেকট্রনগুলো কিভাবে এই শক্তিস্তর এবং উপশক্তিস্তরে সাজানো থাকে, তাকেই ইলেকট্রন বিন্যাস বলে।
    • কোন মৌলের রাসায়নিক ধর্ম কি হবে, তা মূলত এই ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে।
  • পর্যায় সারণির ব্লকসমূহ:

    • পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে বিভিন্ন ব্লকে (s, p, d, f) ভাগ করা হয়েছে।

    • কোন মৌল কোন ব্লকে থাকবে তা নির্ভর করে শেষ ইলেকট্রনটি কোন উপশক্তিস্তরে প্রবেশ করেছে তার উপর।

      • s-ব্লক:

        • গ্রুপ ১ (ক্ষার ধাতু) এবং গ্রুপ ২ (মৃৎক্ষার ধাতু)।
        • এরা খুবই সক্রিয় ধাতু।
      • p-ব্লক:

        • গ্রুপ ১৩ থেকে ১৮ পর্যন্ত।
        • এখানে ধাতু, অধাতু এবং উপধাতু সব ধরনের মৌল আছে।
      • d-ব্লক:

        • গ্রুপ ৩ থেকে ১২ পর্যন্ত।
        • এদেরকে অবস্থান্তর মৌল বলা হয়।
        • এরা বিভিন্ন রকমের জারণ অবস্থা দেখায় এবং এদের যৌগগুলো প্রায়ই রঙিন হয়।
      • f-ব্লক:

        • এদেরকে অন্তর্বর্তী অবস্থান্তর মৌল বলা হয়।
        • ল্যান্থানাইড এবং অ্যাক্টিনাইড সিরিজ এখানে পড়ে।
        • পর্যায় সারণির নিচে আলাদাভাবে এদের স্থান দেওয়া হয়।
  • ব্লকের মধ্যে মৌলের ধর্ম:

    • একই ব্লকের মৌলগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস একই রকম হওয়ায় এদের রাসায়নিক এবং ভৌত ধর্ম অনেকটা মিলে যায়।

উপসংহার:

ইলেকট্রন বিন্যাস এবং পর্যায় সারণির ব্লক সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে, বিভিন্ন মৌলের ধর্ম এবং তাদের যৌগ সম্পর্কে আন্দাজ করা সহজ হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Today's Lesson

The Courses

Search Here

looking for something ?

Categories